আন্তর্জাতিক চাপ কমে যাচ্ছে মিয়ানমার থেকে

জাতির সংঘের পক্ষ থেকে মিয়ানমারের উপর আন্তর্জাতিক চাপ সৃষ্টি করার জন্য যে দপ্তর চালু ছিল সেটি আগামী ৩১ ডিসেম্বর বিলুপ্ত হতে যাচ্ছে। ফলে এ সংকট সমাধানের লক্ষ্যে যারা কাজ করছেন তাদের মধ্যে হতাশার সৃষ্টি হয়েছে। এতে রোহিঙ্গা সংকট নিরসনের যে সম্ভাবনা ছিল সেটিও এখন ক্ষীণ হয়ে আসছে।

জাতিসংঘ মহাসচিব এর আগে বিজয় নামবিরকে মিয়ানমার সংক্রান্ত বিশেষ দূত নিযুক্ত করেছিলেন। ৩১ ডিসেম্বর এ দপ্তর বিলুপ্ত হচ্ছে। এ দপ্তর থাকায় মিয়ানমারের ওপর রোহিঙ্গা ইস্যুতে চাপ ছিল। এখন এ দপ্তর উঠে গেলে চাপ কমে যাবে।

বিজয় নামবির সম্প্রতি জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে রোহিঙ্গা সংকট সম্পর্কে সদস্য দেশগুলোকে অবহিত করেছেন। ওই বৈঠকে জাতিসংঘে যুক্তরাষ্ট্রের স্থায়ী প্রতিনিধি সামান্থা পাওয়ারসহ কয়েকটি দেশের প্রতিনিধি বর্তমান পরিস্থিতিতে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তারা নিরাপত্তা পরিষদ থেকে উদ্বেগ জানিয়ে একটি বিবৃতি দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু চীনের প্রতিনিধি এ ব্যাপারে অসম্মতি জানান। ফলে শেষ পর্যন্ত নিরাপত্তা পরিষদ কোনো বিবৃতি দেয়নি।

যুক্তরাষ্ট্রে ক্ষমতার পরিবর্তন হচ্ছে। ফলে নতুন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসনে সামাস্থা পাওয়ায় তার বর্তমান পদে না থাকার সম্ভাবনাই বেশি। ওবামা প্রশাসনে রোহিঙ্গা ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রে সবচেয়ে বেশি কাজ করেছেন দেশটির জনসংখ্যা ও শরণার্থীবিষয়ক সহকারী মন্ত্রী অ্যান রিচার্ড। অভিবাসন সংক্রান্ত ‘গ্লোবাল ফোরাম ফর মাইগ্রেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট’ (জিএফএমডি) সম্মেলনে যোগ দিতে তিনি ঢাকায় আসেন। এ সময়ে তিনি রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে সর্বশেষ অস্থা জানার চেষ্টা করেছেন। তবে অ্যান রিচার্ডও যুক্তরাষ্ট্রে নতুন প্রশাসনে থাকবেন কি না, তা নিশ্চিত নয়।

তাছাড়া যুক্তরাষ্ট্র সেপ্টেম্বরে মিয়ানমারের ওপর নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়েছে। মিয়ানমার সরকার মানবাধিকার নিশ্চিত করবে বলে প্রতিশ্রুতি দেয়ায় নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হয়। কিন্তু অক্টোবরে রোহিঙ্গা সংকট শুরু হওয়ার পর নির্বিচারে সংখ্যালঘু মুসলমানদের হত্যা এবং রোহিঙ্গাদের বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগ করে চলেছে মিয়ানমার সেনাবাহিনী। ইউরোপীয় ইউনিয়ন ১৯৯১ সালে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে প্রস্তাব নিয়েছিল। সেটিও তুলে নিয়েছে ইইউ। এসব কারণে মিয়ানমার মানবাধিকার লংঘন করে চললেও এ নিয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উদ্যোগ সীমিত।

সীমিত উদ্যোগের মধ্যে ইসলামী সহযোগিতা সংস্থার (ওআইসি) কন্টাক্ট গ্রুপ ১২ ডিসেম্বর রোহিঙ্গা ইস্যুতে নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সদর দপ্তরে একটি বৈঠক করার কথা রয়েছে। আসিয়ানভুক্ত দেশ মালয়েশিয়া ২১ ডিসেম্বর ওআইসির মন্ত্রীপর্যায়ের বৈঠক ডেকেছে। এসব তৎপরতায় রোহিঙ্গা সংকট নিরসনে মিয়ানমারের ওপর চাপ সৃষ্টি হতে পারে।

রোহিঙ্গা ইস্যু সম্পর্কে জানতে চাইলে আন্তর্জাতিক অভিবাসী সংস্থা (আইওএম) মহাপরিচালক উইলিয়াম লেসি সুইং রোববার ঢাকায় জিএফএমডি সম্মেলনে সাংবাদিকদের বলেন, ‘অনিবন্ধিত মিয়ানমারের নাগরিকরা বাংলাদেশে প্রবেশ করেছেন। তাদের সংখ্যা জানতে হলে এখানকার (বাংলাদেশ) সরকারকে আপনাদের জিজ্ঞাসা করতে হবে। তবে এটা আমি বুঝতে পারি যে, তাদের সংখ্যা অনেক বেশিই হবে। আমাদের চেষ্টা হল, সীমান্ত পেরিয়ে যারা দুরবস্থার মধ্যে আছে, বিশেষ করে কক্সবাজার এলাকায় তাদের সমর্থন দেয়া। আমরা স্থানীয় কর্মকর্তাদের সঙ্গে কাজ করছি। এটা শুধু যারা প্রবেশ করছেন তাদের সহায়তার জন্যেই নয়; বরং যারা সেখানে আছেন তাদের জন্য কাজ করছি। আমরা তাই সবাইকে সহায়তা করছি।’

মিয়ানমারে এ সংকটের সমাধান হওয়া উচিত কি না জানতে চাইলে আইওএম মহাপরিচালক বলেন, ‘এ প্রশ্ন বাংলাদেশ ও মিয়ানমারকে করুন। মানবিক সমস্যা নিয়ে কাজ করার সংস্থা হিসেবে আমরা রাজনৈতিক দিকে সম্পৃক্ত হই না। তবে আমি বুঝতে পারি, এ সংকটের রাজনৈতিক দিক নিয়ে বেশ কয়েকটি দেশ কাজ করে থাকে। আমরা যেসব মানুষ খারাপ অবস্থার মধ্যে আছেন, তাদের জন্য বাংলাদেশ ও মিয়ানমার উভয় দেশেই কাজ করে থাকি। তার বাইরে থাইল্যান্ডেও কাজ করি। তারা গৃহহারা কিংবা অর্থনৈতিক অভিবাসী হিসেবে অসহায় হলে আমরা সহায়তা করি।

সীমান্ত চৌকিতে ৯ অক্টোবর দুর্বৃত্তদের হামলায় মিয়ানমারের বর্ডার গার্ড পুলিশের (বিজিপি) নয়জন সদস্য নিহত হওয়ার জের হিসেবে রাখাইন রাজ্যে অভিযান শুরু করে দেশটির সেনাবাহিনী। এতে কমপক্ষে ৮৬ রোহিঙ্গাকে হত্যা করা হয়। রোহিঙ্গাদের বাড়িঘর জ্বালিয়ে দেয়া এবং নারী ও শিশুদের ধর্ষণ-হত্যার মতো ভয়াবহ মানবাধিকার লঙ্ঘন করা হচ্ছে। যদিও বেসরকারি পর্যায়ে এই পরিসংখ্যান অনেক অনেক বেশি।



মন্তব্য চালু নেই