আনন্দ ও উৎসবের মধ্যদিয়ে জিংক সমৃদ্ধ ব্রি ধান ৬২ কাটা শুরু

ফরিদপুরে আনন্দ ও উৎসবের মধ্যদিয়ে জিংক সমৃদ্ধ ব্রি ধান ৬২ কাটা শুরু হয়েছে। বাম্পার ফলনে কৃষকের মুখে হাসি। বর্তমানে এ অঞ্চলের কৃষকেরা ব্যস্ত সময় পার করছে। কৃষকেরা এখন নতুন জাতের ধান কাটা ও মাড়াই কাজে ব্যস্ত। বসে নেই কৃষানীরাও, তারাও ধান উড়ানো ও শুকানোর কাজে ব্যস্ত। আর এই ধান উৎপাদনে কৃষকদের সবসময় পরামর্শ ও প্রশিক্ষণ এবং বিভন্ন ধরনের সহযোগিতা করেছেন কৃষিসম্প্রসারণ অধিদপ্তরে কর্মকর্তা ও বেসরকারী উন্নয়ন সংস্থার প্রতিনিধিগণ।

ব্রি ৬২ জাতের জিংক সমৃদ্ধ ধানের ব্যাপক আবাদ হয়েছে ফরিদপুর জেলার বোয়ালমারী, চরভদ্রাসন, নগরকান্দা ও সদর উপজেলার কানাইপুর, আলিয়াবাদ, মাচ্চর ও কৈজুরী ইউনিয়নে। নতুন এই ধান আবাদ করে খুশি এ অঞ্চলের কৃষকেরা।

ব্রি ৬২ ধান মাত্র ১শ দিনে কাটা যায়। অথচ অন্যান্য আমন ধান একই সময়ে রোপন করে এর চেয়ে অন্তত ১৫ থেকে ২০ দিন পর কাটতে হয়। ফলে ব্রি ৬২ ধান কাটার পর একই জমিতে অন্য যে কোন রবি শস্য আবাদ করা যায়। এতে দুই ফসলি জমিতে অনায়াসে তিন ফসল আবাদ করা সম্ভব। আর সেই কারনেই এ অঞ্চলের কৃষকেরা দিন দিন এই ধান আবাদে আগ্রহ প্রকাশ করছেন। আগামীতে বেশী জমিতে ব্রি ৬২ ধান আবাদ করবেন চাষীরা।
আমাদের দেশের কৃষি বিজ্ঞানীরা নানা জাতের ফসলের নতুন নতুন উন্নত জাত উদ্ভাবনে নিরলস গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন। আর গবেষণা প্রচেষ্টার সফল উদ্ভাবন হচ্ছে জিংক সমৃদ্ধ ব্রি ধান ৬২। শিশুদের শারীরিক গঠন ও রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থায় জিংক বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। ব্রি ৬২ জাতের ধানের এক কেজি চালে ১৯ দশমিক ৬ মিলিগ্রাম জিং ও শতকরা ৯ভাগ আমিষ আছে। চালের আকার বেশ লম্বা, সরু এবং সাদা। প্রতি হেক্টরে গড়ে ৪ থেকে সাড়ে ৪ টন চাল উৎপন্ন হয়। জিংক এর অভাবে জ্বর ও ব্যাক্টেরিয়া জনিত সংক্রমণের প্রবণতা বৃদ্ধি পায়। জিংকের অভাবে শিশুদের ক্ষুধা মন্দা দেখা দেয়। গর্ভবতী মায়ের জিংক এর অভাবে শারীরিক দুর্বলতা দেখা দেয়, গর্ভের সন্তানের স্নায়ুতন্ত্র ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং শিশুদের মানসিক ও বুদ্ধিবৃত্তীয় দক্ষতার সমন্বয়হীনতা পলিক্ষিত হয়।

শিশুকালে ও বয়:সন্ধিকালে শারীরিক বৃদ্ধি ও বিকাশে এবং বুদ্ধির বিকাশে জিংক বিশেষ ভূমিকা পালন করে। জিংক এর অভাব জনিত কারনে ১৫থেকে ১৯ বছরের শতকরা ৪৪ ভাগ মেয়ে খাটো হয়ে যায়। ডায়রিয়া, নিউমোনিয়া এবং মেলেরিয়ায় আক্রান্ত শিশুদের জিংক সেবনে এ রোগের তীব্রতা হ্রাস পায়। এই ধান আউশ, আমন এবং বোরো এই তিন মৌসুমেই আবাদ করা যায় বলে কৃষি কর্মকর্তাগণ জানিয়েছেন। আর এই জাতটি আবাদ করতে তেমন সেচ, সার এবং কীটনাশকের প্রয়োজন হয় না। ফলে আবাদে খরচও কম হয় দেখে কৃষকেরা দন দিন এই ধানের আবাদে আগ্রহ প্রকাশ করেছে।

কৃষক শফিকুল হাসান খান জানান, জিংক সমৃদ্ধ এ ধানের ফলনে আমি খুশ। কম খরচে আর অল্প সময়ে এ ধান পাওা গেছে। ধান কাটার পর ঐ জমিতে আর একটি রবি শস্য করতে পারবেন বলে তিনি জানান।

ফরিদপুর জেলায় চলতি বছর ব্যপক ভাবে জিংক সমৃদ্ধ ব্রি ৬২ ধান আবাদের পিছনে কাজ করেছে বেসরকারী উন্নয়ন সংস্থা আমরা কাজ করি (একেকে)। একেকে’র কর্মকর্তা এস. এম. কুদ্দুস মোল্যা বলেন, হারভেস্টপ্লস বাংলাদেশ এর সহযোগতায় কৃষি ব্যবস্থার উন্নয়ন, খাদ্য নিরাপত্তা ও কৃষকদের উন্নয়নে জন্য কাজ করছি আমরা। তারই অংশ হিসাবে নতুন জাতের জিংক সমৃদ্ধ ব্রি ৬২ ধান আবাদের জন্য চলতি বছর ৫০জন কৃষককে প্রশিক্ষণ, ৪শত কৃষকের সাথে উঠান বৈঠক, বিনামূল্যে ৪শত কৃষককে বীজ এবং ৫০জন কৃষককে সার প্রদান করা হয়েছে। শুধু সার-বীজ দিয়েই নয়, বীজতলা থেকে শুরু করে ধান কাটা পর্যন্ত সার্বক্ষনক কৃষকের পাশে থেকে সব ধরনের সহযোগিতা করেছেন বলে জানান এই কর্মকর্তা।

হারভেস্টপ্লস বাংলাদেশ এর বৃহত্তর ফরিদপুর অঞ্চলের কর্মকর্তা মো. হাসিব হাসান বলেন, আমাদের দেশে অধিকাংশ শিশু ও কিশোরী জিংকের অভাবে অপুষ্টিজনিত সমস্যায় ভোগে। বিশেষ করে শিশুদের বয়োসন্ধিকালে শরীরিক বৃদ্ধি ও বুদ্ধিমত্তা বৃদ্ধির জন্য জিংকের চাহিদা গুরুত্বপূর্ণ। যেহেতু আমাদের তিন বেলা ভাত খেতে হয়। সেহেতেু ভাতের মধ্যে এর চাহিদাটা বিদ্যমান থাকলে অভাবটা সহজেই পূরণ হবে। আর শিশুদের কথা চিন্তা করেই জিংক সমৃদ্ধ ধান উদ্ভাবনের জন্য বাংলাদেশ ধানগবেষণা ইনস্টিটিউটকে হারভেস্টপ্লাস সবধরনের সহযোগিতা করে আসছে।

আগাম জাতের এই আমন ধানের ফলনে বেশ খুশি এ অঞ্চলের কষকেরা। কারণ, এই ধান কেটেই তারা সরিষার আবাদ করতে পারবেন। ফলে একটি বাড়তি ফসল তাদের ঘরে উঠবে। বাজারে এই ধানের দামও বেশী।
ফরিদপুর কৃিষসম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানায়, চলতি বছর প্রায় ১১শ কৃষক ৩৪২ হেক্টোর জমিতে ব্রি ধান ৬২ আবাদ করেছে।

এদিকে ফরিদপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর এর উপ-পরিচালক জি. এম. আবদুর রউফ বলেন, বর্তমান সরকার কৃষি বান্ধব সরকার। কৃষি ক্ষেত্রে উন্নতির জন্য সরকার নানামুখি পদক্ষেপ নিয়েছে। নতুন প্রযুক্তিতে উদ্ভাবিত ব্রি ধান-৬২ মানবদেহের জিংকের অভাব পূরণ করবে। সঠিক নিয়মে চাষাবাদ করতে পারলে এবং আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে প্রতি বছরই কৃষকেরা ভালো ফলন পাবেন বলে তিনি মনে করেন।



মন্তব্য চালু নেই