আদিবাসীদের ভূমি দখল করতেই ধর্ষণ

আদিবাসী নির্যাতনের কোনো বিচারই পূর্বে কখনো হয়নি, তাই এমন ঘটনা প্রতিনিয়ত ঘটে যাচ্ছে। এমন পৈশাচিকতা থেকে একজন আদিবাসী শিশুও রক্ষা পায় না। আদিবাসীদের ভূমি দখলের জন্য দুষ্কৃতকারীরা নারীদের ওপর সহিংসতা শুরু করেছে। তাদের ধারণা, একজন আদিবাসী নারীকে ধর্ষণ করলে তার পরিবার লজ্জায় এই এলাকা ছেড়ে চলে যাবে। আর তখন তারা সেই ভূমি দখল করবে।
শনিবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির গোল টেবিল মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন বক্তরা। আদিবাসী নারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণের দাবিতে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে বাংলাদেশ আদিবাসী নারী নেটওয়ার্ক।
বক্তারা বলেন, যারা আদিবাসীদের ওপর সহিংসতা করছে এরা সবাই ক্ষমতাধর। তাদের নির্দেশে হাসপাতালের দায়িত্বরত চিকিৎসকরা ধর্ষিতা নারীর মেডিকেল রিপোর্ট দেন না। আর মেডিকেল রিপোর্ট না পেয়ে ভুক্তভোগী পরিবারগুলো আইনত কোনো ব্যবস্থা নিতে পারেন না।’
সংবাদ সম্মেলনে আদিবাসী নারীদের ওপর সহিংসতার একটি পরিসংখ্যান ও গবেষণা প্রতিবেদনও তুলে ধরা হয়। এতে বলা হয়, ২০১৪ সালে যৌন ও শারীরিক সহিংসতার শিকার হয়েছেন ১১৭ জন নারী ও শিশু। ২০১৩ সালে যে সংখ্যা ছিল ৬৭ । এদের মধ্যে ধর্ষণ ও গণধর্ষণের শিকার হয়েছেন ২১ জন, ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে ৭ জনকে, শারীরিক লাঞ্ছনা ও আক্রমণের শিকার হয়েছেন ৫৫ জন, ধর্ষণের চেষ্টার শিকার হয়েছেন ২১ জন, অপহরণ ও অপহরণের চেষ্টার শিকার হয়েছেন ১১ জন এবং যৌন হয়রানির শিকার হয়েছেন ২ জন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উইমেন অ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষিকা সাবিহা ইয়াসমিন রোজী সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘কেউ যদি একজন নারীর আত্মমর্যাদা বা সামাজিক মর্যাদা ক্ষুণ্ণ করতে চায় তাহলে সবচেয়ে বড় অস্ত্র হচ্ছে ধর্ষণ। যারা ধর্ষনের সঙ্গে জড়িত তাদের দ্রুত বিচারের আওতায় আনার প্রয়োজন রয়েছে। পাশাপাশি একজন ধর্ষিতার মানসিক স্বাস্থ্যসেবার ব্যবস্থাও জরুরি। এসব ক্ষেত্রে সরকারকে ব্যবস্থা নিতে হবে।’
সহিংসতার শিকার আদিবাসী নারী ও শিশুদের উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ, চিকিৎসা ও আইনী সহায়তা প্রদান, পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন এবং আদিবাসীদের ভূমি পুনরুদ্ধারের জন্য একটি পৃথক ভূমি কমিশন গঠনেরও দাবি জানায় আদিবাসী নারী নেটওয়ার্ক।
সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন- বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সহ-সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট রাখি দাস পুরকায়স্থ, বাংলাদেশ নারী প্রগতি সংঘের সমন্বয়কারী দিলারা রেখা, কাপেং ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক পল্লব চাকমা, বাংলাদেশ আদিবাসী নারী নেটওয়ার্কের ভারপ্রাপ্ত সমন্বয়কারী সিলভিয়া খিয়াং প্রমুখ।



মন্তব্য চালু নেই