আত্রাইয়ে পানিবন্দি লাখো মানুষ, খাদ্য ও ঔষধ সঙ্কট

নওগাঁর আত্রাইয়ে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও বর্ষণের ফলে উপজেলার ছোট যমুনা নদীর তীরবর্তী ফুলবাড়ী বন্যানিয়ন্ত্রণ বেড়িবাঁধ, উপজেলার মিরাপুর নামক স্থানে নওগাঁ-আত্রাই আঞ্চালিক সড়কের বাঁধ, ভরতেঁতুলিয়া বেড়িবাঁধ ও হাটকালুপাড়া বন্যানিয়ন্ত্রণ বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে আত্রাই উপজেলার ৬৫টি গ্রামে পানি বন্দি হয়ে পড়েছেন লাখো মানুষ। পরিবার পরিজন ও গবাদী পশু নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন তারা।

চারদিক জলাবদ্ধতার কারনে কোন কাজকর্ম করতে না পারায় চরম অভাবে দিন কাটাচ্ছেন এসব এলাকার মানুষ। এদিকে বাঁধ ভাঙ্গার সাথে সাথে নওগাঁর সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়েছে। কয়েকদিনের প্রবল বর্ষণ, উজান থেকে ধেয়ে আসা পাহাড়ি ঢল নওগাঁর ছোট যমুনা ও আত্রাই নদীর পানি কমলেও বৃদ্ধি পেয়েছে রোগবালায় খাদ্য ও ঔষধ সঙ্কট।

ইতোমধ্যে আত্রাই উপজেলার ফুলবাড়ি-উদনপৈ বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ১টি পয়েন্টে এবং মিরাপুর নামক স্থানে আত্রাই-নওগাঁ সড়ক ভেঙ্গে প্রবলবেগে যমুনা নদীর পানি লোকালয়ে প্রবেশ করে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। বন্যার পানি প্রবলবেগে প্রবেশ করায় মিরাপুর নামক স্থানের পল্লী বিদ্যুতের মেইন সঞ্চালন লাইনের ৩টি খুটি ভেঙ্গে পড়ায় পুরো উপজেলার বিদ্যুৎ সরবরাহ এখনও স্বাবাবিক হয়নি বিদ্যুৎ পরিস্থিতি। নওগাঁ-আত্রাই সড়ক ভাঙ্গনের কারনে যোগাযোগ ব্যবস্থা সম্পূর্ণরুপে বিচ্ছিন্ন থাকায় সল্পকিছু সিএনজি ও ভুটভুটি চলাচল করলেও অতিরিক্ত ভাড়া নিচ্ছে বলেও যাত্রীদের অভিযোগ রয়েছে।

সরেজমিনে দেখা গেছে বন্যার ফলে উপজেলার প্রায় ৬৫টি গ্রাম , ঘরবাড়ি, স্কুল, কলেজসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান চলতি রোপা আমন ধান থৈ থৈ পানিতে ভাসছে। সাথে সাথে শতাধিক মাছ চাষির পকুর বন্যার পানিতে ভেসে গেছে। পানি বৃদ্ধি পেয়ে উপজেলার প্রায় অর্ধশতাধিক স্কুল ডুবে যাওয়ায় ওই সকল স্কুলে ছুটির ঘোষনা করেছে কর্তৃপক্ষ। আবার কিছুকিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বন্যাকবলিত মানুষদের জন্য আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে।

এদিকে বন্যার পানিতে ডুবে গিয়ে উপজেলার শাহাগোলা ইউনিয়নের ফুলবাড়ি, উদপৈয়, পূর্বমিরাপুর, মিরাপুর, মির্জাপুর, রসুলপুর, জাতোপাড়া, তারাটিয়া, মাগুড়াপাড়া, আকবর পুর, কয়সা, ছোটডাঙ্গা, বড় ডাঙ্গা, উচল, কাশিমপুর , ঝনঝনিয়া, শাহাগোলা, বহলা, চাপড়া, মাধাইমুড়ি, বেড়াহাসনসহ প্রায় ৩৪টি গ্রামের মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।

এবিষয়ে ১নং শাহাগোলা ইউনিয়ন চেয়ারম্যান এস এম মোয়াজ্জেম হোসেন চান্দু জানান, আত্রাই উপজেলার ৮টি ইউনিয়নের মধ্যে আমাদের শাহাগোলা ইউনিয়নের মানুষ সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত ও ইউনিয়ন বাসী এখন মানবেতর জীবন যাপন করছে। তিনি আরো জানান, সরকারের পক্ষ থেকে যে পরিমান ত্রাণ সামগ্রী পেয়েছি তা সকলের চাহিদা মেটানো সম্ভব নয়। এদিকে বন্যার পানিতে দ্রুত তলিয়ে গেছে আত্রাই উপজেলার প্রাই ৫ হাজার হেক্টর রোপা আমন ধানের ক্ষেতসহ অন্যান্য ফসল।

উপজেলার ভরতেঁতুলিয়া ও হাটকালুপাড়া বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙ্গে কাশিয়াবাড়ি, সোনায়ডাঙ্গা, বলরামচক, শিমুলকুচি, বাঁকা, নওদুলি, জামগ্রাম, ভোঁপাড়া, শিবপুর, মালিপুকুর, চকবিষ্টপুর, গুরলয়, স্টুকিগাছা, মহাদিঘী, দরগাপাড়া, আত্রাই মাছবাজারসহ বিভিন্ন গ্রামের বেশকিছু পরিবার ঘরবাড়ি ছেড়ে সরকারি রাস্তায় এবং উচু জায়গায় আশ্রয় নিয়ে খোলা আকাশের নিচে মানবেতর জীবন যাপন করছে।

এ পর্যন্ত বন্যাকবলিত এলাকা পরিদর্শন করেছেন আত্রাই-রানীনগর সংসদ সদস্য ইসরাফিল আলম এমপি, নবাগত জেলা প্রশাসক ড.মোঃ আমিনুর রহমান, নওগাঁ জেলা পুলিশ সুপার মোঃ মোজাম্মেল হক পিপিএম, আত্রাই উপজেলা নির্বাহী অফিসার মনিরুল ইসলাম পাটওয়ারী, আত্রাই থানা অফিসার ইনচার্জ আব্দুল লতিফ খান, উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ড.এম এ আজিজসহ বিভিন্ন ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বৃন্দ।



মন্তব্য চালু নেই