আটক পদার্থটা আসলে কি- হেরোইন, না সিডোএফিড্রিন হাইড্রোক্লোরাইড?

মাদক চোরাচালানে বাংলাদেশ যেন দিনকে দিন স্বর্গভূমি হয়ে উঠছে। এদিকে আটক পদার্থ নিয়েও সৃষ্টি হচ্ছে ধোঁয়াশা। এমনই এক আটক- সাদা দানাদার পদার্থটি হেরোইন, না সিডোএফিড্রিন হাইড্রোক্লোরাইড- তা নিয়ে সৃষ্টি হয়েছে গোলকধাঁধাঁ।

দৈনিক যুগান্তরের এক প্রতিবেদনের তথ্য মতে, ২০১২ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর বিকাল ৩টায় হযরত শাহজালাল (রহ.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে মালয়েশিয়ায় পাচারকালে ধরা পড়া নয়টি কার্টনে মোড়ানো ৫ লাখ আজিজ বিড়ির চালানে ঢোকানো সাদা দানাদার পাউডারকে গ্রেফতার হওয়া আসামি ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় দেয়া জবানবন্দিতে ‘হেরোইনের’ বলে স্বীকার করেন।

এদিকে গত বছরের ৩১ অক্টোবর ডিবি পুলিশের পক্ষ থেকে আদালতে দাখিল করা অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, ‘আসামিরা তাদের পূর্বাভ্যাস হিসেবে ২৫ কেজি ২০০ গ্রাম হেরোইনসদৃশ সাদা পাউডার বেআইনিভাবে, শুল্ক ও কর ফাঁকি দিয়ে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ ঘটায়। যাহা সিডোএফিড্রিন হাইড্রোক্লোরাইড হিসেবে প্রমাণিত। ওষুধ তৈরিতে ব্যবহৃত হয় এবং আইনানুগভাবে শুল্ক ও কর প্রদান করিয়া এটা আমদানিযোগ্য।’

সিডোএফিড্রিন হাইড্রোক্লোরাইড সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওষুধ প্রযুক্তি বিভাগের অধ্যাপক আ ব ম ফারুক বলেন, ‘এটা কাশির ওষুধ তৈরির উপাদান হিসেবে ব্যবহৃত হতো। কিন্তু এর ভেতরে নেশাকারক উপাদান থাকায় বর্তমানে এটা বন্ধের সুপারিশ করি।’ চোরাচালানের ঘটনা শুনে তিনি বলেন, ‘ওষুধ তৈরির কাঁচামাল হিসেবে সিডোএফিড্রিন এভাবে লুকিয়ে বিড়ির মধ্যে আনার প্রয়োজন নেই। নির্দিষ্ট পরিমাণে শুল্ক ও কর প্রদানের মাধ্যমেই এটা আমদানি সম্ভব। তা ছাড়া এই উপাদানের দামও তত বেশি নয়। এক কেজি সর্বোচ্চ ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকার মতো হতে পারে।’

মামলার অভিযোগপত্র দেখে সরকারের একজন আইন কর্মকর্তা বলেছেন, ‘অভিযোগপত্রে সিডোএফিড্রিন হাইড্রোক্লোরাইড কি কাজে ব্যবহৃত হয়, এটা আমদানিযোগ্য কিনা- এসব ব্যাপারে তদন্ত কর্মকর্তার কোনো মন্তব্য থাকা উচিত নয়। এছাড়া একজন আসামি ১৬৪ ধারায় দেয়া জবানবন্দিতে ‘হেরোইনের’ কথা উল্লেখ করলেও অভিযোগপত্রে কেন এটাকে সিডোএফিড্রিন হাইড্রোক্লোরাইড হিসেবে উল্লেখ করা হল তা বোধগম্য নয়।’ হেরোইন পাচারের সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদণ্ড আর সিডোএফিড্রিন হাইড্রোক্লোরাইড চোরাচালানের দায়ে আসামির সাজা এক থেকে সাত বছর। এই চোরাচালানের পেছনে বড় ধরনের সিন্ডিকেট জড়িত রয়েছে বলে ধারণা এই আইন কর্মকর্তার। মামলাটি বর্তমানে ঢাকার বিশেষ ট্রাইব্যুনাল-২-এ বিচারাধীন।

১৬৪ ধারায় আসামি জবানবন্দিতে হেরোইনের কথা উল্লেখ করলেও সেটি অভিযোগপত্রে কেন আসেনি- এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে মামলার সর্বশেষ তদন্ত কর্মকর্তা ঢাকার ডিবি (উত্তর) পুলিশের পরিদর্শক একেএম আলী নুর হোসেন বলেন, অভিযোগপত্র একটা পুলিশ প্রতিবেদন। তদন্তের নথিতে ১৬৪ ধারায় দেয়া জবানবন্দিও অন্তর্ভুক্ত থাকবে। আদালত সব দেখে বিবেচনা করে বিচার করবেন। তবে অভিযোগপত্রে মাদক হিসেবে উল্লেখ না করলেও টেলিফোনে তিনি বলেন, সিডোএফিড্রিন হাইড্রোক্লোরাইড আর হেরোইন একই জাতীয় মাদক। একটির সাজা দু’বছর অন্যটির মৃত্যুদণ্ড- এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেন, সাজার বিষয় ভিন্ন হলে সেটা আদালতই বিবেচনা করবেন।

সূত্র: দৈনিক যুগান্তর



মন্তব্য চালু নেই