আজহারের মৃত্যুদণ্ড

মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় হত্যা, গণহত্যা, লুণ্ঠন, অগ্নিসংযোগসহ ৩টি অভিযোগে জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এটিএম আজহারুল ইসলামের মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল।

মঙ্গলবার দুপুর সাড়ে ১২টায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম এ রায় ঘোষণা দেন।

রায়ে প্রসিকিউশনের অানীত ছয়টি অভিযোগের মধ্যে ২, ৩ ও ৪ নম্বর অভিযোগে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়। ৫ নম্বর অভিযোগে ২৫ বছর কারদণ্ডের আদেশ দেয়া হয়। এ চারটি অভিযোগ সম্পূর্ণ প্রমাণিত হয়েছে। এছাড়া আংশিক প্রমাণিত ৬ নম্বর অভিযোগে পাঁচ বছর কারাদণ্ড দেয়া হয়। আর ১ নম্বর অভিযোগ থেকে খালাস পেয়েছেন আজহার। এ অভিযোগটি প্রমাণিত হয়নি।

জামায়াতের অন্যতম এ শীর্ষ নেতার একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের রায় শুনতে উদগ্রীব হয়ে ছিল জাতি। তার নিজ এলাকা রংপুরের বদরগঞ্জের মানুষ তার ফাঁসিই চেয়েছিল।

এর আগে বেলা ১১টা ১৪ মিনিটে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক আনোয়ারুল হক ১৫৮ পৃষ্ঠার রায় পড়া শুরু করেন। পরে ১১টা ৫৫ মিনিটে রায়ের দ্বিতীয় পর্ব পড়া শুরু করেন বিচারপতি মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর হোসেন।

উল্লেখ্য, গত বছরের ১২ নভেম্বর এটিএম আজহারের বিরুদ্ধে একাত্তরে সংঘটিত হত্যা, নির্যাতন, গণহত্যাসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের ছয়টি অভিযোগে অভিযোগ গঠন করেন ট্রাইব্যুনাল। এরপর একই বছরের ৫ ডিসেম্বর আজহারের বিরুদ্ধে সূচনা বক্তব্য উপস্থাপন করে প্রসিকিউশন। আজহারের বিরুদ্ধে গত বছরের ২৬ ডিসেম্বর সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়।

এর আগে গত ১৮ জুলাই রাষ্ট্রপক্ষ প্রসিকিউশনে আজহারের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করে। পরে গত ২৫ জুলাই অভিযোগ আমলে নেন ট্রাইব্যুনাল।

গত বছর ২২ আগস্ট ট্রাইব্যুনাল-১ মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে এটিএম আজহারুল ইসলামের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করলে ওই দিনই তার মগবাজারের বাসা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।

যেসব অভিযোগে মৃত্যুদণ্ড
দ্বিতীয় অভিযোগ: আসামি আজহার ৭১’এর ১৬ এপ্রিল তার নিজ এলাকা রংপুরের বদরগঞ্জ থানার ধাপপাড়ায় ১৫ জন নিরীহ, নিরস্ত্র বাঙালিকে গুলি করে হত্যা, গণহত্যা, লুণ্ঠন ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। এ ঘটনায় পাকিস্তানি সেনাদের সঙ্গে আজহার অংশ নেন। ওই ঘটনায় শহীদদের মধ্যে ১৪ জনের নাম-পরিচিতি শনাক্ত করে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে।

তৃতীয় অভিযোগ: আজহারের নেতৃত্বে ’৭১-এর ১৭ এপ্রিল রংপুরের বদরগঞ্জের ঝাড়ুয়ারবিল এলাকায় এক হাজার ২শ’রও বেশি নিরীহ লোক ধরে নিয়ে হত্যা, গণহত্যা, লুণ্ঠন ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। যাদের মধ্যে ৩৬৫ জনের নাম-পরিচিতি পাওয়া গেছে। শিশু থেকে ৮০ বছরের বৃদ্ধ, কেউ ওই হত্যাকান্ডের ঘটনায় বাদ যায়নি। হত্যাকান্ডের শিকারদের মধ্যে ২০০ জন হিন্দু ধর্মাবলম্বী ছিলেন, যা প্রমাণ করে একটি বিশেষ গোষ্ঠীকে ধ্বংসের উদ্দেশে ওই হত্যাকান্ড চালানো হয়েছিল।

চতুর্থ অভিযোগ: আজহার ’৭১-এর ১৭ এপ্রিল রংপুর কারমাইকেল কলেজের চারজন অধ্যাপক ও একজন অধ্যাপক পত্মীকে কলেজ ক্যাম্পাস থেকে অপহরণ করে দমদম ব্রিজর কাছে নিয়ে গুলি করে হত্যা করে।

যেসব অভিযোগে কারাদণ্ড
পঞ্চম অভিযোগ: ’৭১-এর ২৫ মার্চ থেকে ১৬ ডিসেম্বরের মধ্যে রংপুর শহর ও বিভিন্ন অঞ্চল থেকে মহিলাদের ধরে এনে টাউন হলে আটকে রেখে ধর্ষণসহ শারীরিক নির্যাতন চালানো হয়। একই সঙ্গে মহিলাসহ নিরীহ নিরস্ত্র বাঙালিদের অপহরণ, আটক, নির্যাতন, গুরুতর জখম, হত্যা ও গণহত্যার সঙ্গে জড়িত ছিলো এ আসামি।
এর অভিযোগে আজহারকে ২৫ বছর কারাদণ্ড দেয়া হয়।

ষষ্ঠ অভিযোগ: ’৭১-এর নভেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে রংপুর শহরের গুপ্তপাড়ায় একজনকে শারীরিকভাবে নির্যাতন করা হয়। একই বছরের ১ ডিসেম্বর রংপুর শহরের বেতপট্টি থেকে আজহারের নেতৃত্বে এজনকে অপহরণ করে রংপুর কলেজের মুসলিম ছাত্রাবাসে নিয়ে আটক রেখে শারীরিক নির্যাতন ও গুরুতর জখম করা হয়।

আংশিক প্রমাণিত এ অভিযোগে ৫ বছরে কারাদণ্ডের আদেশ দেয়া হয়।



মন্তব্য চালু নেই