পিনাক ট্রাজেডির এক বছর

আজও থামেনি কাঁন্না : ধরাছোঁয়ার বাইরে ৭ আসামি

মুন্সীগঞ্জের মাওয়ার কাছে পদ্মা নদীতে পিনাক-৬ লঞ্চডুবির ঘটনার এক বছর পূর্তি হচ্ছে মঙ্গলবার। ২০১৪ সালের ৪ আগস্ট দুই শতাধিক যাত্রী নিয়ে লঞ্চটি ডুবে যায়। দুর্ঘটনায় ৪৯ জনের লাশ উদ্ধার করা হলেও নিখোঁজ ছিলেন অনেকে। এ ঘটনায় বিআইডব্লিউটিএ’র পরিবহন পরিদর্শক জাহাঙ্গীর হোসেন ভূঁইয়া বাদী হয়ে লৌহজং থানায় মামলা করেন। মামলার ৯ আসামির মধ্যে পলাতক ৭ জনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়। তারা পলাতক রয়েছে। ওই সাতজন গ্রেফতার না হওয়ায় এক বছরেও শুরু হয়নি মামলাটির বিচার।

নৌপরিবহনমন্ত্রী মো. শাজাহান খান বলেন, ‘পিনাক-৬ লঞ্চ দুর্ঘটনার মামলাটি খুব দ্রুত শেষ করার চেষ্টা চলছে। তদন্ত প্রতিবেদনের সুপারিশ বাস্তবায়নের জন্য কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে মামলার পলাতক ৭ আসামির বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছেন আদালত।’

শাজাহান খান আরও বলেন, ‘নৌ-আদালতে জনবল সঙ্কট রয়েছে। সঙ্কট দূর করার জন্য আমরা ইতোমধ্যে বিভিন্ন পদক্ষেপ হাতে নিয়েছি। জনবল নিয়োগ হলে মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তি করা যাবে।’

বাংলাদেশ মেরিন কোর্ট পাবলিক প্রসিকিউটর পারভীন সুলতানা বলেন, ‘মামলার ৯ আসামির মধ্যে ৭ আসামির বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হলেও তারা ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়েছেন। পলাতক আসামি থাকায় এখনো মামলার বিচার শুরু করা যায়নি।’

২০১৪ সালের ৪ আগস্ট মাদারীপুরের কাওড়াকান্দি ঘাট থেকে মুন্সীগঞ্জের মাওয়ার উদ্দেশে ছেড়ে আসা পিনাক-৬ যাত্রীবাহী লঞ্চটি পদ্মায় ডুবে যায়। এ দুর্ঘটনায় ৪৯ জনের লাশ উদ্ধার করা হলেও লঞ্চটি আজও উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি।

এ ঘটনায় বিআইডব্লিউটিএ’র পরিবহন পরিদর্শক জাহাঙ্গীর হোসেন ভূঁইয়া বাদী হয়ে লঞ্চের মালিক আবু বকর সিদ্দিককে প্রধান আসামি করে ৬ জনের বিরুদ্ধে লৌহজং থানায় মামলা করেন। পরে মামলায় আরও ৩ জনকে আসামি করা হয়। মামলার ৯ আসামির মধ্যে লঞ্চ মালিক আবু বকর সিদ্দিক কালু কারাগারে এবং তার ছেলে ওমর ফারুক লিমন জামিনে রয়েছেন। অপর ৭ আসামি আব্দুল হাই শিকদার, গোলাম নবী বিশ্বাস, সরদর মোল্লা, মনিরুজ্জামান খোকন, মোতালেব হাওলাদার, ইয়াকুব বেপারি ও সাইদুর রহমান পলাতক রয়েছেন।

লঞ্চ ডুবে যাওয়ার দিনই নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় নূর-উর-রহমানকে প্রধান করে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। পরে ওই বছরের ১৪ সেপ্টেম্বর এ কমিটি নৌপরিবহন সচিবের কাছে প্রতিবেদন জমা দেয়।

কমিটি ৬৩ পৃষ্ঠার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করে। প্রতিবেদনে এ দুর্ঘটনার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে শাস্তির সুপারিশ করে কমিটি। এ ছাড়া প্রতিবেদনে নৌ-দুর্ঘটনা রোধে বিভিন্ন সুপারিশ করা হয়।

প্রতিবেদনে লঞ্চ মালিক, চালকসহ দুর্ঘটনার জন্য বিআইডব্লিউটিএ’র মাওয়া নদীবন্দরের পরিবহন পরিদর্শক মো. জাহাঙ্গীর ভূঁইয়া, পরিচালক (নৌ-নিরাপত্তা ও ট্রাফিক) শফিকুল হক ও যুগ্ম-পরিচালক (নৌ-নিরাপত্তা ও ট্রাফিক) মো. রফিকুল ইসলামকে দায়ী করা হয়।

বার্ষিক সার্ভেতে ত্রুটি থাকার পরও চলাচলের জন্য সময় বর্ধিত করে টোকেন ইস্যু করার ও সার্ভে সনদ ইস্যুর জন্য ডিক্লারেশন ফরম মহাপরিচালকের কাছে না পাঠিয়ে দায়িত্ব অবহেলার জন্য ইঞ্জিনিয়ার এ্যান্ড শিপ সার্ভেয়ার মীর্জা সাইফুর রহমানকেও দায়ী করে কমিটি।

পিনাক-৬ লঞ্চের নকশা তৈরি, পরবর্তীকালে স্ট্যাবিলিটি বুকলেট প্রণয়ন ও ইনক্লাইনিং টেস্ট রিপোর্টে ইঞ্জিনিয়ার মো. সাইদুর রহমান ‘সন্তোষজনক’ বলেছিলেন। পরবর্তীতে লঞ্চটি ডুবে যাওয়ায় তাকেও দায়ী করা হয়েছে প্রতিবেদনে।



মন্তব্য চালু নেই