আজও তার অতৃপ্ত আত্মা ঘুরে বেড়াচ্ছে এই প্যালেসে!

বিখ্যাত সাহিত্যিক লীলা মজুমদার, যিনি সম্পর্কসূত্রে সত্যজিৎ রায়ের ফুফুও, একবার একটা কথা লিখে গিয়েছিলেন। লীলা মজুমদার লিখেছিলেন, মানুষের পৃথিবীতে ভাল আর মন্দ দুই থাকে। এখন মৃত্যুর পরে অশরীরী জগতে কেবল খারাপটাই থাকবে, সে তো হতে পারে না! ভালটা কোথায় যায়?

তাই লীলা মজুমদারের লেখা ভূতের গল্প মানেই ছিল ভাল ভূতের গল্প। মজার ব্যাপার, তেমনই এক ভাল ভূত এখনও বাস করে ভারতের রাজস্থানের কোটায়। ব্রিজরাজ ভবন প্যালেস হোটেলে। লেখার শুরুতে লীলা মজুমদারের কথা তোলার আরও একটা কারণ ছিল। সেটা ব্রিটিশ রাজ প্রসঙ্গে। ওই ভাল আর মন্দের তুলনার ব্যাপারে!

সাধারণত ব্রিটিশ শাসনের কথা বললেই আমাদের চোখের সামনে সবার আগে ভেসে ওঠে অত্যাচারের ছবি। স্বাভাবিক, বেশ অনেক ব্রিটিশ শাসক কম অত্যাচার তো আর করেননি নেটিভদের উপরে! কিন্তু, ওই ব্রিটিশদের মধ্যেই ভালও তো ছিল! যাদের অনেকেই নেটিভদের প্রচুর উপকারও করেছেন।

অথচ, সিপাহি বিদ্রোহের সময়ে উপমহাদেশের সিপাহিরা সে সব বিচারের মতো অবস্থাতেই ছিল না। সে সময় এক দিকে ব্রিটিশরা বিদ্রোহ দমনের জন্য বিচার না করে অকাতরে মেরে ফেলছেন আমাদের! আর অন্য দিকে, ভারতের সিপাহিরাও সাদা চামড়া দেখলেই নির্দ্বিধায় হত্যা করছে!

সে ভাবেই সিপাহিদের বিদ্রোহের মুখে পড়েন মেজর বার্টন। দুই ছেলে নিয়ে তিনি সেই সময়ে থাকতেন কোটার ব্রিজ রাজ প্যালেসে। ক্ষিপ্ত সিপাহিরা প্রাসাদ ঘেরাও করে। এবং হত্যা করে দুই সন্তান-সহ মেজর বার্টনকে। নিয়তির এমনই পরিহাস, সিপাহিরা চাইলেও প্রাসাদছাড়া করতে পারেনি বার্টনকে। আজও তার অতৃপ্ত আত্মা ঘুরে বেড়াচ্ছে প্যালেসে।

এর অনেক দিন পরে কোটার মহারানি সেই প্রাসাদে থাকতে আসেন। বার্টনকে যে ঘরে হত্যা করা হয়েছিল, সেটা ছিল রানির বসার ঘর। রানি একদা এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছিলেন, তিনি অনেকবার মেজর বার্টনকে প্রাসাদে দেখেছেন।

পরে ১৯৮০ সালে এই প্যালেস হস্তান্তরিত হয়। রানি চলে যান অন্যত্র। ঐতিহ্যবাহী এই প্যালেস পরিণত হয় বিলাসবহুল হোটেলে।
এবং, অভিযোগ জানাতে থাকেন অনেকেই, তারাও দেখেছেন মেজর বার্টনকে।

তবে আজ পর্যন্ত কারও কোনও ক্ষতি করেননি মেজর। গভীর রাতে একটা বেত হাতে তাকে ঘুরে বেড়াতে দেখা যায় ব্রিজরাজ ভবনে।
শুধু একটা ব্যাপারেই রেগে যান তিনি! যদি দেখেন কোনও পাহারাদার কাজে ফাঁকি দিয়ে ঘুমোচ্ছে!

তখন কী করেন মেজর? উঁহু! বেত নয়! সোজা গিয়ে একটা থাপ্পড় কষান সেই ঘুমন্ত পাহারাদারকে! তাই আবার ঘুরে-ফিরে আসতে হয় সেই লীলা মজুমদারের কথায়! কে বলেছে, ভূত মানেই সে খারাপ হবে?



মন্তব্য চালু নেই