আচরণবিধির কেয়ার করছেন না এমপিরা!

দায়সারা নির্বাচনে গঠিত দশম জাতীয় সংসদের চলতি বছরের শুরুর অধিবেশন যাচ্ছেতাই ভাবে চলছে। অধিকাংশ সংসদ সদস্য চলছেন ফ্রি-স্টাইলে। অধিবেশন কক্ষে পালনীয় আচরণবিধি কেয়ার করছেন না। নবীনরা হয়তো অজ্ঞতার কারণে এসব মানছেন না। কিন্তু জ্যেষ্ঠ সদস্যরাও কোনো কিছুতে গা করছেন না।

এর আগে বহুবার সতর্ক করে দেয়া হলেও এবার অব্যাহত বিশৃঙ্খলা নিয়ে চুপচাপ স্পিকারের চেয়ার। চিফ হুইপের পক্ষ থেকে সতর্ক করা হলেও তা কর্ণপাত করছেন না জ্যেষ্ঠ সদস্যরা।

সংসদের বৈঠক চলাকালীন অধিবেশন কক্ষে সংসদ সদস্যদের আচরণ কী হবে তা স্পষ্ট করা আছে সংসদের কার্যপ্রণালী বিধিতে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এসব নির্দেশনা সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা নেই নবীন সদস্যদের। অন্যদিকে চোখের সামনে জ্যেষ্ঠ সদস্যদের হরহামেশা আচরণবিধি লঙ্ঘন করতে দেখে তারাও বেপরোয়া আচরণ করছেন।

আচরণবিধিতে উল্লেখ আছে, অধিবেশন চলাকালে সংসদের কাজের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নয় এমন কোনো বই, সংবাদপত্র বা চিঠিপত্র পাঠ করা যাবে না।

কিন্তু অধিবেশন কক্ষে প্রায় সবদিনই সরকারদলীয় জ্যেষ্ঠ সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরীকে পত্রিকার পাতায় চোখ বোলাতে দেখা যায়

অধিবেশন কক্ষে ঘুমানোর অভিযোগে ইতোমধ্যে সাবেক স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুনের আসন পরিবর্তন করে দেয়া হয়েছে। ট্রেজারি বেঞ্চের প্রথম সারি থেকে সরিয়ে দ্বিতীয় সারিতে দেয়া হলেও তার ঘুম কাটছে না। একই অভিযোগ রয়েছে সাবেক আরেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহীউদ্দীন খান আলমগীর ও সাবেক শ্রম প্রতিমন্ত্রী বেগম মুন্নুজান সুফিয়ানের বিরুদ্ধে।

সংসদে বক্তৃতার সময় ছাড়া নীরবতা পালনের নির্দেশ দেয়া হলেও কেউই তা মানেন না। সময় পেলেই দু’তিনজন সদস্য এক জায়গায় বসে আড্ডায় মেতে ওঠেন। কখনো কখনো নিজেদের মধ্যে বিতর্কে জড়িয়ে পড়েন।

সভাপতি ও বক্তৃতারত সদস্যের মধ্যবর্তী স্থান দিয়ে চলাচলের ওপর বিধি নিষেধ আরোপ করা আছে। কিন্তু বেশ কয়েকজন সদস্য এ আচরণবিধি মানেন না। অধিকাংশ সদস্য সভাপতির আসন ও বক্তৃতারত সদস্যের মধ্যে একটি কাল্পনিক রেখা টেনে তার নিচ দিয়ে মাথা নত করে চলাচল করেন।

এ তালিকার শীর্ষে রয়েছেন আওয়ামী লীগ দলীয় সাবেক চিফ হুইপ আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ ও স্বতন্ত্র সদস্যদের জোট সভাপতি হাজী মোহাম্মদ সেলিম। অন্য সদস্যদের বক্তৃতা চলাকালে কোনো প্রকার টিকা-টিপ্পনি না কাটার জন্য বলা হলেও হরহামেশাই সেটা করেন হাজী সেলিম।

সংসদে প্রবেশ করার বা সংসদ কক্ষ ত্যাগ করার সময় এবং তার আসন গ্রহণ বা ত্যাগ করার সময়ে সভাপতির প্রতি সম্মান প্রদর্শন করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। কিন্তু অনেক সদস্য সংসদ কক্ষ ত্যাগ করার সময় এই ভব্যতার ধার ধারেন না। অনেকে তো পশ্চাদ্দেশ প্রদর্শন করে বেরিয়ে যান।

একজন আরেক জনের চেয়ারে বসা নিষেধ। কিন্তু বেশিরভাগ সময় ফাঁকা থাকে না জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের আসনটি। তার অনুপস্থিতিতে নিজ দলেরই জ্যেষ্ঠ সদস্যদের অনেকেই ওই চেয়ারে বসে থাকেন।

অন্য সদস্যদের চেয়ারে এমন ঘটনা প্রায়ই ঘটে। অধিবেশনের ২০তম দিনে (গত সোমবার) পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী বীর বাহাদুর উশে সিংকে দীর্ঘ সময় স্পিকারের চেয়ার পেছনে রেখে আওয়ামী লীগের যুগ্ন-সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফের সঙ্গে কথা বলতে দেখা যায়।

একজন অন্যজনের চেয়ারে বসার ঘটনায় স্পিকার শিরিন শারমীন চৌধুরী গত সংসদে সদস্যদের দৃষ্টি আকর্ষণ করলেও এবার আর কিছু বলছেন না। এই নির্লিপ্ততার কারণে বাকি অন্যান্য আচরণবিধি ভঙের বিষয়টি এখন সংসদে রেওয়াজে পরিণত হয়েছে।

কোনো সদস্যের বক্তৃতা করার সময় কোনো প্রকার উচ্ছৃখল উক্তি, গোলমাল সৃষ্টি বা অপ্রীতিকর আচরণ করার বিষয়ে বিধি নিষেধ থাকলেও মনপুত বক্তব্য না হলেই এ আচরণবিধি লঙ্ঘন করেন ক্ষুব্ধ সদস্যরা।

সবশেষ গত ১৬ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্টের (বিএনএফ) সভাপতি এসএম আবুল কালাম আজাদ জাতীয় পার্টি নিয়ে বক্তব্য দিলে তাতে ক্ষুব্ধ হয়ে হইচই শুরু করেন বিরোধী দলের সদস্যরা। শুধু তাই না, জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য লক্ষীপুর-২ আসনের মোহাম্মদ নোমান বিএনএফ সভাপতির দিকে তেড়ে যান।

এসব বিষয়ে ডেপুটি স্পিকার মো. ফজলে রাব্বী মিয়ার দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেন, ‘বিষয়গুলো মাঝে মধ্যেই সংসদ সদস্যদের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়। মূলত আগে থেকেই আমাদের সংসদে বিষয়টি সেভাবে প্রতিপালিত হয়ে আসছে না। তবে সকল সদস্যের অধিবেশন কক্ষে রুলস অব প্রসিডিউরস মেনে চলা উচিৎ।’



মন্তব্য চালু নেই