আগামী দুই মাসে প্রবল তাপদাহের আশঙ্কা

ফাল্গুনের মাতাল হাওয়ায় সব হিম আঁচলে বেঁধে শীত বুড়ি বিদায় নিয়েছে। বসন্তে তাই একটু একটু করে বাড়ছে রোদের তাপ। বাড়ছে তাপমাত্রাও।

আবহাওয়া অধিদফতর বলছে, এই তাপমাত্রা আরো বাড়বে। এমনকি মাসের শেষ দিকে তা তাপপ্রবাহে রূপ নিতে পারে।

আর এপ্রিল ও মে মাসে দেশে তিনটি প্রবল তাপপ্রবাহ ও চার থেকে পাঁচটি মৃদূ থেকে মাঝারি তাপপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে।

দেশের ইতিহাসে ১৯৭২ সালের ১৮ মে রাজশাহীতে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৪৫ দশমিক ১ ডিগ্রি। ঢাকার ইতিহাসে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ১৯৬০ সালে ৪২ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। চলতি বছরের তাপদাহে এই তাপমাত্রা অতিক্রম হওয়ারও একটি আশঙ্কা রয়েছে।

আবহাওয়াবিদরা বলছেন, এর থেকে ধারণা করা যাচ্ছে, কী ধরনের তাপদাহ আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে!

এদিকে দীর্ঘমেয়াদী পূর্বাভাস দিতে আবহাওয়া অধিদফতরের গঠিত বিশেষজ্ঞ কমিটি বলছে, চলতি মাসেই উপকূলীয় এলাকা সর্বোচ্চ চারদিন কালবৈশাখীর কবলে পড়তে পারে। মাসের শেষ দিকে দেখা মিলতে পারে মৃদু তাপপ্রবাহের। এপ্রিলে দেশে কালবৈশাখী ও ঘূর্ণিঝড় হতে পারে। মে মাসেও ঘূর্ণিঝড় হতে পারে।

আবহাওয়া বিভাগ মার্চ থেকে মে মাস পর্যন্ত তিনমাসের পূর্বাভাসে বলছে, মার্চ মাসে বৃষ্টিপাতের সঙ্গে দিনের তাপমাত্রাও থাকবে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি। এই তাপমাত্রা ক্রমশ বাড়তির দিকে থাকবে।

বিভাগটি আরো বলছে, এ মাসে দেশের উত্তর, উত্তর-পশ্চিম ও মধ্যাঞ্চলে এক থেকে দু’দিন মাঝারি বা তীব্র কালবৈশাখী বা বজ্রসহ ঝড় ও দেশের অন্যান্য স্থানে তিন থেকে চার দিন হালকা বা মাঝারি কালবৈশাখী হতে পারে। এ মাসে দিনের তাপমাত্রা স্বাভাবিকের (৩৪ থেকে ৩৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস) চেয়ে এক থেকে দুই ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি থাকতে পারে।

পূর্বাভাসে আরো বলা হয়েছে, মাসের শেষের দিকে দেশের পশ্চিম ও উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের ওপর দিয়ে একটি মৃদু তাপপ্রবাহ (৩৬ থেকে ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস) বয়ে যেতে পারে। ওই সময়ে বঙ্গোপসাগরে একটি নিম্নচাপ সৃষ্টি হতে পারে। প্রধান নদ-নদীগুলোর পানি প্রবাহ স্বাভাবিক থাকবে বলেও পূর্বাভাসে উল্লেখ করা হয়েছে।

এপ্রিল মাসের পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, এপ্রিলে বঙ্গোপসাগরে দু-একটি নিম্নচাপ সৃষ্টি হতে পারে। এর মধ্যে অন্তত একটি ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিতে পারে। দেশের উত্তর, উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও মধ্যাঞ্চলে দুই থেকে তিনদিন বজ্রসহ মাঝারি, তীব্র কালবৈশাখী বা বজ্রসহ ঝড় এবং দেশের অন্যত্র তিন থেকে চারদিন হালকা বা মাঝারি কালবৈশাখী বা বজ্রসহ ঝড় হতে পারে।

এপ্রিল মাসে দেশের উত্তর ও উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে একটি তীব্র তাপপ্রবাহ (৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস) এবং অন্যত্র দুই থেকে তিনটি মৃদু (৩৬ থেকে ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস) থেকে মাঝারি (৩৮ থেকে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস) তাপপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে। এ মাসে দেশে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা আছে।

আর মে মাসের পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, এ মাসেও বঙ্গোপসাগরে দু-একটি নিম্নচাপ সৃষ্টি হতে পারে, এর মধ্যে অন্তত একটি ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিতে পারে। দেশের উত্তর, উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও মধ্যাঞ্চলে দুই থেকে তিনদিন বজ্রসহ মাঝারি, তীব্র কালবৈশাখী বা বজ্রসহ ঝড় এবং দেশের অন্যত্র তিন থেকে চারদিন হালকা বা মাঝারি কালবৈশাখী বা বজ্রসহ ঝড় হতে পারে।

তবে মে মাসে দেশের উত্তর ও উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে দুটি তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে বলে আবহাওয়া বিভাগ বলছে। এর বাইরেও দুই থেকে তিনটি মৃদু এবং মাঝারি তাপপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে।

আবহাওয়া অধিদফতরের ফোরকাস্টিং অফিসার (ডিএফও) আবহাওয়াবিদ রুহুল কুদ্দুস জানান, এ বছর আবহাওয়া কিছুটা বৈরী। এক্ষেত্রে মৃদু ও মাঝারি তাপদাহ সাধারণ ঘটনা হতে পারে। পূর্বাভাস অনুযায়ী, এ বছর তা সহ্যক্ষমতা ছাড়িয়ে যেতে পারে।

রুহুল কুদ্দুস আরো বলেন, দুর্বল মৌসুমী বায়ুপ্রবাহ এবং বাতাসে আর্দ্রতার মাত্রা বেশি থাকায় সারা দেশে তীব্র গরম অনুভূত হতে পারে এবার। নিয়মিত বৃষ্টিপাত শুরু না হওয়া পর্যন্ত তাপমাত্রা কমবে না।



মন্তব্য চালু নেই