আওয়ামী লীগের কমিটি ঘোষণা প্রেসিডিয়ামে যাচ্ছেন মায়া, দুই ভাগ হচ্ছে আওয়ামী লীগ

সম্মেলনের দীর্ঘ ২০ মাস পর ঘোষণা করা হচ্ছে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের কমিটি। দুই ভাগেই বিভক্ত করা হচ্ছে মহানগর কমিটিকে। নেতৃত্বে আসছে নতুন মুখ। দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সর্বোচ্চ নীতির্নিধারণী ফোরাম প্রেসিডিয়ামে স্থান দিয়ে দুই মহানগরের অলিখিত সমন্বয়েক দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে মহানগর আওয়ামী লীগের প্রাণ মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়াকে। অন্যদিকে ময়মনসিংহ-৮ আসনের সাবেক এমপি আবদুস সাত্তারকে কেন্দ্রীয় কমিটির বন ও পরিবেশ বিষয়ক বা শিল্প বাণিজ্য বিষয়ক সম্পাদক পদে নিয়োগ করা হচ্ছে। দলের শীর্ষ একাধিক নেতা বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। সূত্রটি জানায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার ঘনিষ্ঠ কয়েকজন শীর্ষ নেতাদের জানিয়েছেন, মহানগর কমিটিতে দুই ভাগে করার কোনো বিকল্প নেই। কারণ আমরাই (আওয়ামী লীগ) ঢাকা সিটি করপোরেশনকে দুই ভাগে বিভক্ত করেছি। ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ আন্দোলন-সংগ্রামের ভ্যানগাড বা হৃৎপিণ্ড। এ ছাড়া দীর্ঘদিনের ত্যাগী নেতাদের মূল্যায়ন করতে হবে। এ জন্য দুই ভাগে কমিটি করা হলে যথাযথ মূল্যায়ন করেই কমিটি ঘোষণা করা হবে।

মহানগর আওয়ামী লীগের নতুন কমিটির একটি প্রাথমিক তালিকা দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনার হাতে। ঈদের পর ঘোষণা করার কথা থাকলেও সেপ্টেম্বর প্রথম সপ্তাহ লাগতে পারে। কারণ হিসেবে জানা গেছে, রেওয়াজ অনুযায়ী শোকের মাসে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী কোনো সংগঠনের কমিটি ঘোষণা বা সম্মেলন হয় না।

দুই ভাগে কমিটিতে দক্ষিণের সভাপতি পদে আলোচনায় আছেন, দলের মহানগরের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও খাদ্যমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম ও আরেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাজী মোহাম্মদ সেলিম। সাধারণ সম্পাদক পদে আলোচনায় আছেন সাবেক মেয়র হানিফের পুত্র ও মহানগরের সাংগঠনিক সম্পাদক সাঈদ খোকন এবং মহানগরের সাংগঠনিক সম্পাদক শাহে আলম মুরাদ। উত্তরের সভাপতি পদে ঢাকা-১০ আসনের সংসদ সদস্য ও সাবেক সভাপতি এ কে এম রহমতউল্লাহ ও ঢাকা-১৫ আসনের সংসদ সদস্য কামাল আহমেদ মজুমদার। সাধারণ সম্পাদক পদে ঢাকা-১৪ আসনের সংসদ সদস্য আসলামুল হক আসলাম, ঢাকা-১৬ আসনের এমপি ইলিয়াস মোল্লার ও মোহাম্মদপুর থানা শাখার সভাপতি সাদেক খানের নাম শোনা যাচ্ছে। তবে কেন্দ্রের একটি অংশ উত্তরের দায়িত্বে ডাকসুর সাবেক ভিপি ও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য আখতারুজ্জামানকে দেখতে চান।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে আওয়ামী লীগের এক শীর্ষ নেতা , মহানগরের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক ও ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়াকে আগামী বিভক্ত কমিটিতে না রেখে দলের দুর্দিনের এই কাণ্ডারির অভিজ্ঞতাকে অন্যভাবে কাজে লাগাতে চাচ্ছেন দলীয় হাইকমান্ড। সেই চিন্তা থেকে মায়াকে দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম প্রেসিডিয়ামে অন্তর্ভুক্ত করার কথা ভাবা হচ্ছে। তাকে প্রেসিডিয়ামে এনে অলিখিতভাবে রাজধানীর সার্বিক সাংগঠনিক দায়িত্ব দিয়ে মহানগরের দুই কমিটি দেখভালের দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে। অন্যদিকে কেন্দ্রীয় কমিটির শিল্প ও বাণিজ্য, বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদকের দুটি পদে যে কোনো একটিতে ময়মনসিংহ-৮ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আবদুস সাত্তারকে নিয়োগ করার মনোভাব দেখিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আবদুস সাত্তার দশম সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন পেলে জাতীয় পার্টির কারণে তাকে আসনটি ছেড়ে দিতে হয়।

গত ২০১২ সালের ২৭ ডিসেম্বর ওয়ার্ড, থানা কমিটির সম্মেলন না করে নিয়ম রক্ষার জন্য সম্মেলন করা হয় আওয়ামী লীগের আন্দোলন-সংগ্রামের ভ্যানগাড হিসেবে বিবেচিত ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের। সম্মেলনের এক বছর সাত মাস পেরিয়ে গেলেও কমিটি ঘোষণা না হওয়ায় নেতা-কর্মীদের হতাশ বিরাজ করছে। দায়িত্ব না পাওয়ায় নেতা-কর্মীরাও গা ছেড়ে দিয়েছেন। তার প্রভাব গত ২৫ থেকে ২৮ জুন আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে প্রতিফলন হয়েছে। প্রথম দিনের অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় উপস্থিত থাকার কথা থাকলেও লোক সমাগম না হওয়ায় তিনি যাননি। পরেরদিন সংসদ উপনেতা যাওয়ার কথা থাকলেও সভামঞ্চের সামনে কোনো নেতা-কর্মী ছিল না। পরেরদিন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অনুষ্ঠানে লোকজনের সমাগম ঘটে। তবে অন্যবারের তুলনায় হতাশাজনক। এরপরই ঘুম ভাঙে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের। তাগাদা আসে দ্রুততম সময়ের মধ্যে মহানগর আওয়ামী লীগের নতুন কমিটির। মহানগর কমিটির একটি প্রাথমিক খসড়া করা হয়েছে। অন্যদিকে মহানগরের শীর্ষ নেতাদের পরামর্শ নিয়ে থানা কমিটির সভাপতি-সম্পাদকের নামও চূড়ান্ত করা হয়েছে বলে দলীয় সূত্র নিশ্চিত করেছেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে মহানগর আওয়ামী লীগের এক শীর্ষ নেতা বলেন , যারা দলের দুঃসময়ে কাজ করেছেন, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে অবিচল ছিলেন তারাই শীর্ষ পদে আসছেন। ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম বলেন, কমিটি ঘোষণার সিদ্ধান্ত দলীয় সভানেত্রীর ওপর নির্ভর করে। তিনি যেদিন চাইবেন, সেদিনই ঘোষণা করবেন।

আরেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাজী মোহাম্মদ সেলিম বলেন, ঈদের পর কমিটি ঘোষণা করা হবে বলে শুনেছি। তবে দলের রেওয়াজ অনুযায়ী শোকের মাস আগস্টে কমিটি ঘোষণা বা সম্মেলন করা হয় না। সেজন্য সেপ্টেম্বর পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। কমিটি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, দলের জন্য যারা নির্যাতিত হয়েছে। সর্বস্তরের নেতা-কর্মীদের কাছে যার গ্রহণযোগ্যতা আছে দলীয় সভানেত্রী তাকেই বেছে নেবেন। কমিটিতে যেই আসুক, সভানেত্রীর সিদ্ধান্তকে মেনে নিয়ে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বাস্তবায়নে সংগঠনকে শক্তিশালী করতে কাজ করব।



মন্তব্য চালু নেই