আইভীর বিজয় আত্মবিশ্বাস বাড়িয়েছে আ.লীগে

নানা জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে অবশেষে দ্বিতীয়বারের মতো নারায়ণগঞ্জবাসী আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভীকে মেয়রের আসনে বসার রায় দিয়েছেন। অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের ভেতর দিয়ে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে নৌকার প্রার্থীর এ বড় বিজয় আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে দিয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগে। সৎ, যোগ্য, দক্ষ, সাহসী ও সঠিক প্রার্থী বেছে নিলে যে কোনও নির্বাচনেই আওয়ামী লীগকে পরাজিত করা কঠিন হবে দলটির শীর্ষ পর্যায়ের এ বিশ্বাসের জায়গাটি এ দফায় আরও সুদৃঢ় করেছে নারায়ণগঞ্জে সদ্য শেষ হওয়া এই সিটি নির্বাচন।

নারায়ণগঞ্জ নির্বাচনে নৌকার প্রার্থীর বিজয়ের পর দলটির কেন্দ্রীয় নেতারা তাদের দৃঢ় আত্মবিশ্বাসের কথা জানিয়েছেন। তারা জানিয়েছেন, নারায়ণগঞ্জ সিটি নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষতার উৎকৃষ্ট উদাহরণ। যে নির্বাচন নিয়ে বিএনপি কোনও কারচুপির বা অনিয়মের জোরালো অভিযোগ তুলতে পারেনি। ফলে এই নির্বাচন প্রমাণ করে আওয়ামী লীগের জনপ্রিয়তা ঊর্ধ্বমুখী। এই বিজয় নৌকার তথা আওয়ামী লীগের এবং সরকারের।

জানা গেছে, রাতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে গণভবনে কেন্দ্রীয় নেতারা দেখা করতে গেলে আইভীর বিজয় নিয়ে প্রধানমন্ত্রী তার উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন। সেইসঙ্গে এই নির্বাচনে যেসব কেন্দ্রীয় নেতা দিনরাত পরিশ্রম করেছেন তাদের ধন্যবাদ জানান।

আইভীর বিজয় পর্যালোচনা করতে গিয়ে আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা বলেন, আইভীর সততা, দক্ষতা ও সাহসিকতার জন্য নারায়ণগঞ্জের মানুষ তাকে মেয়র হিসাবে বেছে নিয়েছে। আইভীর নেতৃত্ব দেওয়ার গুণাবলীকে সম্মান জানিয়েছে তারা।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে দলটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহাবুবউল আলম হানিফ বলেন, নারায়ণগঞ্জ নির্বাচন প্রমাণ করেছে আওয়ামী লীগের জনপ্রিয়তা ঊর্ধ্বমুখী। তিনি বলেন, এ নির্বাচন আওয়ামী লীগকে আত্মবিশ্বাসী করে তুলেছে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ যে কোনও নির্বাচনে জেতার মতো জনপ্রিয়তা আওয়ামী লীগের রয়েছে। তিনি বলেন, আইভীর বিজয় শেখ হাসিনার বিজয়। সৎ, সাহসী, মেধাবী, দক্ষ-যোগ্য নেতৃত্বের বিজয়।

জানতে চাইলে সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফরউল্যাহ বলেন, ক্ষমতায় থেকেও যে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্ভব আওয়ামী লীগ তা প্রমাণ করেছে। নারায়ণগঞ্জ নির্বাচন নিরপেক্ষতার দিক থেকে ইতিহাসে দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। যোগ্য, দক্ষ ও সাহসী নেতৃত্ব জনগণ চায়-এটা আরেকবার প্রমাণ করেছে নারায়ণগঞ্জে আইভীর বিজয়।

জানতে চাইলে সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী প্রশ্ন ছুড়েন, ‘আচ্ছা, বিএনপি এবার কী বলবে?’ তিনি বলেন, ‘নারায়ণগঞ্জে সৎ, যোগ্য ও দক্ষ নেতা হিসেবেই আইভীকে বেছে নিয়েছেন শেখ হাসিনা। আর জনগনও যে তাকেই চায় ভোট দিয়ে তার প্রমাণ দিয়েছে। তিনি বলেন, আইভীর দক্ষ নেতৃত্বের কারণেই এবারও নারায়ণগঞ্জের মানুষ আইভীর বিকল্প আর কাউকে ভাবতে চায়নি।’

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ঢাকা বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মুহিবুল হাসান নওফেল বলেন, শেখ হাসিনার যে সঠিক নেতৃত্ব বুঝতে পারেন এই বিজয় তারই বহির্প্রকাশ। তিনি বলেন, এই নির্বাচনে শেখ হাসিনার প্রতি আস্থা-বিশ্বাস স্থাপন করে তার পছন্দের প্রার্থীর জন্য নারায়ণগঞ্জের তৃণমূলে দলীয় নেতা-কর্মীরা যেভাবে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন সেখান সব চক্রান্ত হওয়ার আর কোনও সুযোগই ছিল না। এ বিজয় সুষ্ঠু রাজনীতির।

আওয়ামী লীগের নীতি-নির্ধারণী সূত্রগুলো আরও জানায়, নারায়ণগঞ্জে আইভীর হাতে নৌকা তুলে দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তার বিচক্ষণতা ও নেতৃত্ব বাছাই করার যোগ্যতা-দক্ষতা আবারও প্রমাণ করেছে শেখ হাসিনা কখনও ভুল করেন না। ওই সূত্রগুলো জানায়, দলের অভ্যন্তরে নানা প্রতিকুলতার মুখোমুখি হয়ে একক সিদ্ধান্তে আইভীর হাতে নৌকা তুলে দিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘আমার বাছাই কখনও ভুল হতে পারে না। আইভী বিজয়ী হওয়ায় রাজনৈতিক দূরদর্শিতায় নিজের ওপর আরও আস্থা পেলেন শেখ হাসিনা।

কেন্দ্রীয় নেতারা জানান, নারায়ণগঞ্জের স্থানীয় নেতৃত্ব ও স্থানীয় রাজনীতির বাইরে গিয়ে আইভীকে বেছে নেন শেখ হাসিনা। নির্বাচনের আগের দিন পর্যন্ত নারায়ণগঞ্জে দলের অবস্থান নিয়ে চিন্তিত ছিলাম আমরা। এই নির্বাচনই একমাত্র ঘটনা যেখানে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের তৎপরতা ছিল অত্যন্ত বেশি।কেন্দ্রের নিবিড় পর্যবেক্ষণে ছিল নারায়ণগঞ্জের আওয়ামী লীগের প্রতিটি নেতাকর্মীর গতিবিধি। তব তা কম দুশ্চিন্তার ছিল না আওয়ামী লীগের জন্যে। সেখানে আওয়ামী লীগের দ্বিধা-বিভক্ত অবস্থানের কারণে সুষ্ঠু নির্বাচন বিজয়ের পথ রুদ্ধ করে দিতে পারে বলেও পরামর্শ এসেছে আমাদের কাছে। কিন্তু আইভীকে নিয়ে শেখ হাসিনার বিশ্বাসের জায়গা এতই শক্তিশালী ছিল যে, জয়-পরাজয় যাই হোক না কেন-নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ যাতে হয় সেজন্য সংশ্লিষ্টদের পরামর্শ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।

সরকার নিরপেক্ষ নির্বাচন উপহার দিয়ে শেখ হাসিনা তার কথা রেখেছেন। অন্যদিকে আওয়ামী লীগও বিজয় লাভ করেছেন। আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা বলছেন, নারায়ণগঞ্জ নির্বাচন দুটি বিজয় এনে দিয়েছে আমাদের জন্যে। নৌকার বিজয় আওয়ামী লীগের বিজয়। অপরদিকে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন উপহার দিতে পেরে সরকার অর্জন করেছে আরেকটি বিজয়।খবর বাংলা ট্রিবিউনের।



মন্তব্য চালু নেই