আইভীর জ্যামে ট্রাফিক পুলিশ শামীম ওসমান!

নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের যানজট নিরসনে সিটি মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভীকে এর আগে পরামর্শ দিয়েছিলেন নারায়ণগঞ্জ-৪ (ফতুল্লা ও সিদ্ধিরগঞ্জ) আসনের সংসদ সদস্য শামীম ওসমান।

সেটা ছিল আজ থেকে মাস চারেক আগে জানুয়ারির ঘটনা। সে সময় বন্দর নগরীর যানজট নিরসনে ছাত্রলীগ নেতাদের নিয়ে ট্রাফিক পুলিশের দায়িত্বও পালন করেছিলেন এমপি শামীম ওসমান।

শামীম ওসমানের অভিযোগ, তার সেই সব পরামর্শে কান দেননি সিটি মেয়র আইভী। সে কারণে যানজট থেকে রেহাই পায়নি নগরবাসী। তাই ছাত্রলীগ নেতাদের নিয়ে আবারো ট্রাফিক পুলিশ সেজে রাজপথে নামলেন শামীম ওসমান।

শনিবার বিকেল ৩টার দিকে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ পুরাতন পাগলা-ফতুল্লা সড়কে যখন তীব্র যানজট, তখন ট্রাফিক পুলিশের ভূমিকায় নামলেন এমপি শামীম ওসমান। যানজট নিরসনে তিনি কিছুক্ষণ দায়িত্বও পালন করলেন।

নিজ সংসদীয় এলাকা না হলেও ছাত্রলীগ নেতাদের নিয়ে এভাবে যানজট নিরসন করতে গত ১৪ জুন নারায়ণগঞ্জ রাইফেল ক্লাবে বসে আগাম ঘোষণা দিয়েছিলেন শামীম ওসমান। সেই ঘোষণা বাস্তবায়ন করতেই শনিবার বিকেলে রাস্তায় নেমে আসেন তিনি।

এদিকে আগাম ঘোষণা দিয়ে গত ১৬ জুন বৃহস্পতিবার থেকেই যানজট নিরসনে মাঠে নামে এমপি শামীম ওসমানের অনুগত ছাত্রলীগ ও যুবলীগসহ স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা।

সেই কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করতেই শনিবার বিকেল ৩টায় চাষাঢ়ায় আসেন শামীম ওসমান। এসময় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের কাছ থেকে তিনি যানজট সম্পর্কে তথ্য জানেন।

পুরাতন পাগলা-ফতুল্লা সড়কে তীব্র যানজটের মধ্যে ট্রাফিকের ভূমিকায় এমপি শামীম ওসমান সড়কে চলাচলকারী আনন্দ পরিবহনের কাউন্টারে যান। সেখানে রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা ওই পরিবহনের যাত্রীবাহী বাস দ্রুত সরিয়ে নিতে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন। বলেন, একটির বেশি গাড়ি রাখা যাবে না। দ্রুত গাড়ি সরিয়ে নিয়ে যাও।

শামীম ওসমান থাকাকালীন জেলা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা মাইকে সাধারণ যাত্রীদের ঘোষণা দেন, রাস্তা ছেড়ে ফুটপাত দিয়ে চলাচল করুন। গত ১৪ জুন নারায়ণগঞ্জ রাইফেল ক্লাব থেকে ফুটপাতে হকার বসার জন্য ঘোষণা দেয়া হয়েছিল।

কিন্তু ওই ঘোষণার পরদিন ১৫ জুন থেকে ফুটপাতের রাস্তা দখল করে বসে যায় হকাররা। এতে করে লোকজনের চলাচলে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়। এর ওপর যানজট থাকায় চরম বিড়ম্বনায় পড়ে পথচারীরা।

রাস্তায় লেজে গোবরে অবস্থা সামাল দিতে গিয়ে সেখানে অবস্থানরত ট্রাফিক পুলিশের পরিদর্শক শামীম আহমেদের সঙ্গে কথা বলেন এমপি শামীম ওসমান।

শামীম আহমেদ সাংবাদিকদের বলেন, নারায়ণগঞ্জ পুরাতন সড়ক ও লিংক রোড দিয়ে ঢাকাগামী গাড়িগুলোর মধ্যে আলাদা লাইন করতে ডিভাইডার দেয়া কিংবা যানজট নিরসনে ভালো কোনো ব্যবস্থা নেয়া যায় কি-না সে বিষয়ে কথা হয়েছে এমপি সাহেবের সঙ্গে।

এমপি শামীম ওসমানের উদ্দেশ্যকে প্রশংসা করে ট্রাফিক পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, গাড়িচালকরা যদি এ নিয়ম না মানে তাহলে অনেক বড় সমস্যা হবে। যানজট আরো বাড়বে।

এ ব্যাপারে শামীম ওসমান সাংবাদিকদের বলেন, রোজার মধ্যে যানজটের কারণে লোকজনকে বেশি দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। এর আগে জানুয়ারিতে যানজট নিরসনে আমরা যে প্রস্তাবনা সিটি করপোরেশনকে দিয়েছিলাম, তারা সেগুলো কর্ণপাত করেনি। এবারের রোজার মধ্যে শহরের যানজট নিরসনে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা কাজ করছে।

এদিকে সিটি করপোরেশনের মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী ভিন্ন প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন। তিনি বলেছেন, যানজট নিরসন করা তো ট্রাফিক পুলিশের কাজ।

প্রসঙ্গত, নারায়ণগঞ্জে যানজট নিরসনে গত ১২ জানুয়ারি থেকে অনুসারীদের নিয়ে মাঠে নামেন এমপি শামীম ওসমান।

তালিকায় ছিল তোলারাম কলেজ, সরকারি মহিলা কলেজ ও নারায়ণগঞ্জ কলেজের অর্ধশতাধিক বিএনসিসি ক্যাডেট, শিক্ষার্থী, ছাত্রলীগ, যুবলীগসহ স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা।

সেই অভিযানের পর গত ৫ মাস যানজট নিরসনে কোনো উদ্যোগ চোখে পড়েনি। গত ১৪ জুন হঠাৎ করেই আবার যানজট নিরসনে সদলবলে মাঠে নামেন এমপি শামীম ওসমান।



মন্তব্য চালু নেই