আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর লাগাম টানছে ইসি

জাতীয় সংসদ নির্বাচনসহ সব নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর জন্য অর্থ বরাদ্দে নিয়ন্ত্রণ ও স্বচ্ছতা আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। কোন বাহিনী কোন খাতে কী পরিমাণ অর্থ ব্যয় করবে, কতজন সদস্য দায়িত্ব পালন করবে খাতওয়ারি বিস্তারিত জানিয়ে নির্দিষ্ট ফরম বা ছকে ইসির কাছে অর্থ চেয়ে চিঠি দিতে হবে। ইসি তা যাচাই-বাছাই শেষে ৬০ থেকে ৮০ শতাংশ অর্থ বরাদ্দ দেবে। বাকি অর্থ দেয়া হবে নির্বাচন শেষে।

এর আগে চতুর্থ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা বাবদ ব্যয় বিগত ২০০৯ সালের তৃতীয় উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের তুলনায় তিনগুণ বাড়ালেও নির্বাচনকেন্দ্রিক সহিংসতা কমাতে পারেনি বরং বেড়েছিল। এসময় প্রায় ১০ জনের প্রাণহানী ঘটে। একইসঙ্গে নির্বাচনের স্বচ্ছতা নিয়েও প্রশ্ন তোলে সুশীল সমাজ।

এই বিতর্কের মধ্যেই সোমবার ইসির বৈঠকে ব্যয়ে নিয়ন্ত্রণ ও স্বচ্ছতা সংক্রান্ত নীতিমালার অনুমোদন দেয়া হলো। বিষয়টি খুব শিগগিরই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রধানদের আনুষ্ঠানিকভাবে জানিয়ে দেয়া হবে। নির্বাচন কমিশন সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।

ইসি সূত্র জানায়, বর্তমানে নির্বাচন উপলক্ষে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ব্যয়ের কোনো খাতওয়ারি হিসাব নেই। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নির্বাচনের আগে নিজেদের মতো থোক বরাদ্দ চেয়ে চিঠি দেয় আ সে অনুযায়ীই অর্থ দেয়া হয়। এতে একই বাহিনীর একাধিকবার অর্থ চেয়ে চিঠি দেয়ার ঘটনাও ঘটেছে। এখন থেকে সে সুযোগ আর থাকছে না। অর্থ ব্যয়ের স্বচ্ছতা আনতে সুনির্দিষ্ট নিয়মে অর্থ চাইতে হবে।

সূত্র আরো জানায়, প্রতিটি নির্বাচনের আগেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অর্থ বরাদ্দ নিয়ে এক ধরনের সমস্যার সৃষ্টি হয়। তাদের দাবিকৃত অর্থের পরিমাণ প্রায়ই যুক্তিসঙ্গত হয় না। এ কারণে চাহিদা মূল্যায়ন করে নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ বরাদ্দ দেয় ইসি। ফলে এ নিয়ে টানাপোড়েনেরও সৃষ্টি হয়। দেখা গেছে, একই দায়িত্ব পালন করতে কোনো কোনো বাহিনী অস্বাভাবিক অর্থ বরাদ্দ চেয়ে চিঠি পাঠায়। পরে অধিকতর পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে অর্থের পরিমাণ অর্ধেকে কমিয়ে দেয়ার নজিরও রয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ইসির উপ-সচিব পর্যায়ের এক কর্মকর্তা বলেন, সবাইকে এক ফরমেটে আনা হচ্ছে। ইতোমধ্যে সব বাহিনীর সঙ্গে এ বিষয়ে বৈঠক করা হয়েছে। ইসি অনুমোদন দেয়ায় বিষয়টি সম্পর্কে শিগগির সবাইকে আনুষ্ঠানিকভাবে জানিয়ে দেয়া হবে।

প্রসঙ্গত, দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইসির ব্যয়ের পরিমাণ ২৬৪ কোটি ৬৭ লাখ ৪৯ হাজার ৪৬৯ টাকা। এর মধ্যে নির্বাচন পরিচালনায় ব্যয় ৮১ কোটি ৫৫ লাখ ৪১ হাজার ৩৪১ টাকা। আইনশৃঙ্খলা বাবদ খরচ হয় ১৮৩ কোটি ১২ লাখ ৮ হাজার ১২৮ টাকা। এর মধ্যে আনসার ও ভিডিপির ব্যয় ৬২ কোটি ৫৯ লাখ ৯২ হাজার ৬৮৮, পুলিশের ব্যয় ৪৫ কোটি ৭৩ লাখ ১ হাজার ৬২৫, কোস্টগার্ডের ব্যয় ৮ লাখ ১২ হাজার ৫০০, সশস্ত্র বাহিনীর ব্যয় ৫৬ কোটি ৭৬ লাখ ৭৪ হাজার ৭৪০, বিজিবির ব্যয় ১৫ কোটি ২৮ লাখ ১১ হাজার ৭৫, র‌্যাবের ব্যয় ২ কোটি ৬৫ লাখ ১৫ হাজার ৫০০ টাকা। এছাড়া বিভিন্ন চাহিদার ভিত্তিতে পরে আরও কিছু অর্থ দেয়া হয়েছে।

এছাড়া ৫ ধাপের উপজেলা নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলায় আনসার-ভিডিপি ৮০ কোটি ৬৬ লাখ টাকা, পুলিশ-র‌্যাব ৬৩ কোটি টাকা, সশস্ত্র বাহিনী ৩৬ কোটি টাকা, বিজিবি ১৮ কোটি ১২ লাখ টাকা ও কোস্টগার্ড ৩০ লাখ টাকা ব্যয় বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।



মন্তব্য চালু নেই