আইএস সেজে বাচ্চু মেম্বারের হুমকি : নির্মমতার শিকার বড়াইগ্রামের এক শিক্ষক

নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলার নগর ইউনিয়নের পাঁচবাড়িয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মিজানুর রহমানকে গত ৮ অক্টোবর শিরশ্ছেদ করার ঘোষণা দিয়েছিল বড়াইগ্রাম উপজেলার নগর ইউনিয়নের ৯ নং ওয়ার্ডের বর্তমান মেম্বার মো. বাচ্চু। শিক্ষক মিজানুর রহমানের পরিবারের বরাত দিয়ে জানা যায় ৮ অক্টোবর সকালে তাদের বাসার সামনে ১০ টাকার একটি নোটে তাকে সতর্ক করে লিখা ‘যেকোনো মুহূর্তে আপনাকে শিরোশ্ছেদ করার ক্ষমতা রাখি আমরা’, “ইসলামিক স্টেট-আইএস”।

সেদিনের পরই মিজানুর রহমান বড়াইগ্রাম থানায় জিডি করেন। ব্যাপারটা এলাকায় জানাজানি হলে সবাই বুঝতে পারে মেম্বার বাচ্চুই এই কাজের প্রধান হোতা। প্রশাসনকে জানানো হলেও তার বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি থানার পুলিশ।

প্রধান শিক্ষক মিজানুর রহমানকে নাটোর উপজেলার সৎ, গুনি ও জ্ঞানী ব্যক্তি হিসেবে সবাই চেনেন। তিনি কখনও অন্যায়কে প্রশ্রয় দেননি। তাই এলাকার দুষ্কৃতিকারী, সন্ত্রাস, মাদক ব্যবসায়ীদের কাছে তিনি ছিলেন চক্ষুশূল। প্রায় সময়ই তার কাছে চাঁদাও দাবি করত সন্ত্রাসীরা। তিনি মাঝে মধ্যে প্রাণের ভয়ে ওইসব মাদক ব্যবসায়ী, সন্ত্রাসীদের চাঁদা দিতে বাধ্য হয়েছেন।

তিনি আতঙ্কের মধ্যে থেকেও আড়ালে ওই সকল ঘৃণ্য নরপশুগুলোকে ১০ বস্তা চালও দিয়েছেন। কারণ তবুও তারা যেন তার কোনো ক্ষতি না করে।

সরেজমিনে ঢাকার ল্যাবএইড হাসপাতালের ৫ম তলার ৪২৮ নাম্বার কেবিনে গিয়ে দেখা যায় দুই পা ও এক হাত প্লাস্টার করা। শরীরের বিভিন্ন জায়গায় রক্ত জমাট বাধা। যন্ত্রণায় কাতর হয়ে আছেন। শরীরে প্রচণ্ড জ্বর। ব্যথার যন্ত্রণায় কাতর। মাঝে মধ্যে চোখ খোলে তাকান। তার সঙ্গে কথা বলতে গেলে তিনি শুধু বলেন, আমি কি অন্যায় করেছিলাম, যার জন্য আমার উপর এমন হামলা হলো।

তার ছেলে আরিফ কল্লোল বলেন, আমার বাবাকে অনেক সময়ই বাচ্চু ও তাদের সাঙ্গ-পাঙ্গরা ভয় ভীতি ও হত্যার হুমকি দিয়েছিল। কিন্তু বাবা এগুলো নিয়ে এতটা গভীরভাবে চিন্তা করেননি। তিনি শুধু আমাদের বলতেন তার কেন শত্রু থাকবে? যারা বার বার হুমকি দিয়েছিল তারা প্রকাশ্য দিবালোকে হত্যার চেষ্টা করেছেন। থানায় জিডি করেও শেষ রক্ষা হলো না।

তার বাবার শারীরিক অবস্থা নিয়ে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি জানান, অনেকগুলো পরীক্ষা নিরীক্ষা দেওয়া হয়েছে। সেগুলো ডাক্তার দেখে পরবর্তী সিদ্ধান্ত জানাবেন। ল্যাবএইড হাসপাতালের অর্থোপেডিক বিশেষজ্ঞ আমজাদ হোসেন জানালেন, তার ডান পা, বাম হাত ভেঙ্গে গেছে, বাম পায়েও ফ্লেকচার আছে। নতুন করে আবার ভেন্ডিস করা হয়েছে। তাকে তিনদিন অবজারভেশনে রেখে তারপর পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

তিনি আরো বলেন, ওনাকে প্রাথমিকভাবে মনে হয়েছে পঙ্গু করার জন্যই এই আঘাতগুলো করা হয়েছে।

নগর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নিলুফার ইয়াসমিন নীলু ইউপি সদস্য বাচ্চু সম্পর্কে বলেন, বাচ্চু ও তার সাঙ্গ-পাঙ্গরা এই এলাকায় সব ধরনের অপকর্ম করে বেড়ায়। তারা জুয়ার আসর থেকে শুরু করে ফেনসিডিল, গাঁজা, ইয়াবা ব্যবসা করে ও তারা সেবন করে। এলাকার তরুণ প্রজন্মকে নষ্ট করছে গুটি কয়েক বাচ্চুর মতো সন্ত্রাসীরা। কেউ ভয়ে তাদের কিছুই বলেনা। কেউ মুখ খুললেই ভয় ভীতি ও হত্যার হুমকি দেওয়া হয়। আমাদের প্রধান শিক্ষককে কয়েকবার হুমকি দিয়েছিল। সর্বশেষ ১০ টাকার নোটের উপর স্যারের শিরশ্ছেদ করবে বলে টাকাটা তার বাসার পাশে রেখেও গিয়েছিল। এই ব্যাপারে সবাই সোচ্চার হয়েছিলাম। তারপর আমাকেও এই বাচ্চু নানান সময় হেনস্থা করেছে। আমাকে হত্যার হুমকি দিয়েছিল। সেই ব্যাপারে থানায় জানানোর পরও কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। বাচ্চুর নামে বেশ কয়েকটি মামলা রয়েছে। এখন শিক্ষক মহোদয় যিনি সবার কাছেই সৎ ও জ্ঞানী ব্যক্তি হিসেবে সকলের কাছে প্রিয়ভাজন তাকে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যার চেষ্টা করেছে। এটা সত্যি আমাদের সমাজের জন্য ন্যক্কারজনক এবং কলঙ্কজনক। আমরা এর সুষ্ঠু বিচার আশা করছি।

এ প্রসঙ্গে বড়াইগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শাহরিয়ার হোসাইনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমরা তদন্ত করেছি। তদন্ত করে কিছুই পাইনি। সুনির্দিষ্ট কারও নাম উল্লেখ না থাকায় কাউকে আমরা আটক করতে পারিনি। তাদের পক্ষ থেকেও কোন নাম বলেননি। এখন অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা যেহেতু ঘটেই গেছে তাই যাদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে তাদেরকে ধরার চেষ্টা অব্যাহত আছে। এরই মধ্যে ১ জনকে আমরা আটক করেছি। বাকিদের দ্রুত আটক করতে সক্ষম হব বলে আশা করছি।

সন্ত্রাসী বাচ্চুর বিষয়ে তিনি বলেন, তার নামে বেশ কয়েকটি মামলা রয়েছে। তার মধ্যে একটি মামলার গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি আছে। তাকে আমরা শীঘ্রই গ্রেফতার করে আইনের কাছে সোপর্দ করব।



মন্তব্য চালু নেই