অস্ট্রেলিয়ায় ‘বাংলাদেশ গ্যালারি’

মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ডের জন্মটা ক্রিকেটের জন্যই। অথচ কি জানেন, এই ভেন্যুর দর্শক ধারন ক্ষমতা বর্ধিত করার নেপথ্যে কিন্তু ক্রিকেটের কোন ক্রেজ নেই! অস্ট্রেলিয়ান রুলস ফুটবল এবং রাগবির ব্যাপক জনপ্রিয়তায় বাধ্য হয়ে ৮০’র দশকে দর্শক সংখ্যা ১ লাখ ২৫ হাজারে উন্নীত করার পরিকল্পনা হাতে নিতে হয়েছে এমসিজিকে। যে কারণে এখানে ক্রিকেটের পাশাপাশি চলছে রাগবি এবং অস্ট্রেলিয়ান রুলস ফুটবল। শুধু মেলবোর্নই নয়, ক্যানবেরাতেও রাগবি, অস্ট্রেলিয়ান রুলস ফুটবল এবং ক্রিকেট চর্চা চলছে একসঙ্গে, একই মাঠে। রোববার সকালে বাংলাদেশ এবং দুপুরে আফগানিস্তান পালাক্রমে যে মাঠে করেছে অনুশীলন, সেই কিপ্যাক্স ওভাল কিন্তু এখনো প্রথম শ্রেনীর ক্রিকেট ভেন্যু নয়!
বরং এই মাঠে বাংলাদেশ-আফগানিস্তানকে অনুশীলন করতে দেখে ক্যানবেরা প্রবাসী জনি’র বিস্ময়- ‘এ তো দেখছি এখানকার বিখ্যাত রাগবি ক্লাব রাইডার্সের নিজস্ব মাঠ। ওই দেখেন ক্লাবটির সাইনবোর্ড।’ রাগবির মাঠে ক্রিকেট পিচ, অস্ট্রেলিয়ায় এটা নতুন কিছু নয়। এমনকি নিউজিল্যান্ডেও না। ক্রিকেট মাঠে অস্ট্রেলিয়ান রুলস ফুটবল- তাতেও যে ক্ষতির কিছু নেই!
মানুকা ওভাল এখন শুধুই বরাদ্ধ ক্রিকেটের জন্য। আজ থেকে প্রায় ৬০ বছর আগের কথা। ১৯৫৪-৫৫ মওসুমে সফরকারী এমসিসি’র বিপক্ষে স্থানীয় প্রধানমন্ত্রী একাদশের প্রীতি ম্যাচ দিয়ে অস্ট্রেলিয়ার রাজধানীবাসী পেয়েছে স্বতন্ত্র ক্রিকেট মাঠ। তারপরও এই মাঠ কালে-ভদ্রে পায় আন্তর্জাতিক ম্যাচ আয়োজনের সুযোগ।
১৯৯২ সালের বিশ্বকাপে এই মাঠের আন্তর্জাতিক অভিষেক দক্ষিণ আফ্রিকা আর জিম্বাবুয়ের মধ্যকার ম্যাচ দিয়ে। আর নিউ সাউথ ওয়েলসের হোম ভেন্যু হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে মানুকা ওভাল ১৯৭৮-৭৯ সালে। অথচ, এই ভেন্যুতে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে প্রত্যাবর্তন ম্যাচে অপেক্ষা কতো করতে হয়েছে জানেন? ১৬ বছর!
গিট্টু খুলেছে ২০০৮ সালে সিবি সিরিজে ভারত-শ্রীলংকা ম্যাচ দিয়ে। সিডনী-মেলবোর্নের রশি টানাটানিতে ১৯০৮ সালে অপেক্ষাকৃত কম বসতি হয়েও ক্যানবেরা পেয়েছে রাজধানীর মর্যাদা, পেয়েছে রাষ্ট্র্রের প্রশাসনিক দপ্তরগুলো। ১৯৮০ সালে মেলবোর্নে ইলেকট্রনিক স্কোরবোর্ড যাত্রা শুরু করলে খুলে ফেলা হয় ম্যানুয়াল স্কোরবোর্ড। সেই বোর্ডটিই মানুকা ওভালের সম্বল!
এই ভেন্যুরই একটি গ্যালারির নামকরণ করা হয়েছে ‘বাংলাদেশ গ্যালারি’। নামকরনটা অস্থায়ী। বিশ্বকাপ ক্রিকেটে দর্শক টানতে এই কৌশল নিয়েছে কর্তৃপক্ষ। কৌশলটি সাড়াও ফেলেছে যথেষ্ট! অনলাইনে বিশ্বকাপ ক্রিকেটের টিকিট বিক্রির শুরুতেই অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী বাংলাদেশীরা ‘বাংলাদেশ গ্যালারির’ সবগুলো টিকিট কিনে নেয়।
এবার একবার কল্পনা করে দেখুন তো, ১৩ হাজার দর্শক আসনের এই স্টেডিয়ামটি আগামী ১৮ ফেব্রুয়ারী রুপ পাবে মিরপুর শের-ই বাংলা, চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরীর মতো ক্রিকেট ক্রেজে! যেখানে সিংহভাগ দর্শক সমর্থন করবে মাশরাফি, সাকিব-মুশফিকদের!
ক্যানবেরার মানুকা ওভালের দেখাদেখি মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ডের গ্যালারিতেও বরাদ্ধ রাখা হয়েছে বাংলাদেশ গ্যালারি। অনেকটা ঢাকার বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে আবাহনী-মোহামেডানের জন্য ভাগ করা গ্যালারির মত। যদিও সেই গ্যালারির ধারণ ক্ষমতা খুব বেশি নয়। তারপরও বিচ্ছিন্নভাবে ছড়িয়ে ছিটিয়ে না বসে, একটি গ্যালারিতে দাঁড়িয়ে-বসে বাংলাদেশ দলকে সমর্থনের সুযোগ করে দেওয়া- এটাই বাম কম কিসে!
[সংগৃহীত]



মন্তব্য চালু নেই