অমূলক ভয় ‘ফোবিয়া’: জেনে নিন কারণ ও লক্ষণ

সাধারণত ফোবিয়া বলতে আমরা ভয়টাকেই বুঝে থাকি। তবে ফোবিয়া মানে শুধু ভয় নয়। ভয়ের সাথে জড়িয়ে থাকে অকারণ দুশ্চিন্তা, আতকিংত ভাব আর প্রচণ্ড রকমের একটা বিরক্তি। আর সেই সঙ্গে থাকে ভয়ের পরিস্থিতিকে এড়িয়ে চলার প্রবণতা। অপছন্দের পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে পারার অক্ষমতা থেকেই জন্ম নেয় ফোবিয়া। উদ্বেগ বা দুশ্চিন্তার যথার্থ, যুক্তিসম্মত কারণ থাকলে সেটা ভয়। কিন্তু ভিত্তিহীন কারণে দুশ্চিন্তার নামই ফোবিয়া। সেই ফোবিয়া থেকে কেউ যখন এমন কাজ করতে শুরু করে যেটা নিজের এবং অন্যের অসুবিধা, ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায় তখন সেটা রোগ। চিকিত্‍সাশাস্ত্র অনুযায়ী ফোবিয়া এক ধরনের অ্যাংজাইটি ডিজঅর্ডার।

ফোবিয়ার রকমফের

সোশ্যাল ফোবিয়া
নিজেকে সমাজে মেলামেশার অনুপযুক্ত মনে হওয়া। সব সময় মনে হয়, পাছে লোকে কিছু ভাবে! কেবলই মনে হয় সবাই তার আচার-আচরণ খুঁটিয়ে লক্ষ্য করছে বা তার সম্পর্কে খারাপ কিছু ভাবছে। ফলে কথা বলার সময় বেশি সচেতন হয়ে পড়ে, অস্বস্তিতে নার্ভাস বোধ করা, লজ্জা পাওয়া। এ সবই মনে আতংকের সৃষ্টি করে।

স্পেশাল ফোবিয়া
বিশেষ কোনো পরিস্থিতি বা নির্দিষ্ট কোনো জিনিসে অকারণে অতিরিক্ত ভয় পাওয়া। সাধারণত পাঁচ রকমের স্পেশাল ফোবিয়া হয়।
জীবজন্তু: যেমন সাপ, কুকুর, মাকড়সায় ভয়।
স্থান: যেমন উঁচু জায়গা, পানি, অন্ধকার।
বদ্ধাবস্থা: যেমন লিফট, টানেল ইত্যাদি।
রক্ত, আঘাত, অন্যান্য চিকিত্‍সা পদ্ধতিতে ভয় পাওয়া।
এছাড়াও নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে যাওয়া বা মৃত্যুভয়।

এগারোফোবিয়া
খোলামেলা জায়গায় যেতে ভয় পাওয়া। রোগীরা ঘরের মধ্যে নিরাপদ জায়গায় বন্দি অবস্থায় থাকতে পছন্দ করে। সাধারণত শপিং মল, সিনেমা মল, সাবওয়ের মতো ভিড়ের জায়গা এরা এড়িয়ে চলে।

ফোবিয়া হওয়ার কারণ

– মানুষের আচরণ মস্তিষ্কের নিউরোকেমিক্যাল দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। নিউরোকেমিক্যালের সঞ্চলনে তারতম্য ঘটলে আচরণে পার্থক্য দেখা যায়।

– অনেক ক্ষেত্রে ফোবিয়া বংশগত। তবে মা-বাবার যে ধরনের ফোবিয়া সন্তানেরও একই ফোবিয়া হবে এমন কোনো কারণ নেই। অনেক সময় মা-বাবা নিজেরা অ্যাংজাইটির শিকার হলে বাচ্চাদের মধ্যেও সেই ডিজঅর্ডার থাকলে তা বুঝতে পারে না কারণ তারা ওই রকম ব্যবহারে কোনো অস্বাভাবিকতা দেখতে পান না।

– বয়স বা অন্য কোনো শারীরিক অসুবিধা মানুষকে মানসিকভাবে দুর্বল করে তোলে। সেই কারণে যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলা করার ক্ষমতা হারায়। পরিস্থিত মোকাবিলা করার মেকানিজমে এই দুর্বলতা মানুষের আচরণে একটা পরিবর্তন আনে। সেই পরিবর্তনটাই ফোবিয়ার আকার ধারণ করে। এছাড়া সাইকোসোমেটিক ডিজঅর্ডার যেমন ব্রঙ্কিয়াল অ্যাজমা, ডায়াবেটিস এগুলো থেকেও কখনো কখনো সাময়িক বা দীর্ঘস্থায়ী ফোবিয়ার জন্ম হতে পারে।

– অনেক সময় আচমকাই লিফটে উঠতে গিয়ে বা বারান্দা থেকে নিচে তাকাতে গিয়ে ভয় করে। এই অ্যাটাক সাময়িক। ক্ষেত্রবিশেষে চিকিত্‍সার প্রয়োজন হতে পারে।

– জীবনের শুরুতে কোনো খারাপ অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হলে অনেক সময় পরবর্তীকালে সোশ্যাল ফোবিয়া দেখা যায়।

ফোবিয়ার শারীরিক লক্ষণ

– হার্টরেট বেড়ে যাওয়া।
– গলা, মুখ শুকিয়ে যাওয়া।
– প্রচণ্ড ঘাম।
– বুকে ব্যথা।
– পেশিতে টান, কাঁপুনি।
– বমিবমি ভাব।
– নিঃশ্বাস নিতে অসুবিধা।
– পেটে অসুবিধা, ডায়রিয়া।
– মাথা ঘোরা, অজ্ঞান হয়ে যাওয়া।

ফোবিয়ার মানসিক লক্ষণ

– অমূলক ভয়ের পরিস্থিতি, বাইরের লোকজন এড়িয়ে চলা।
– আত্মবিশ্বাস কমে যাওয়া।
– হতাশ লাগা।

চিকিত্‍সা

বায়োলজিক্যাল ট্রিটমেন্ট
এই পদ্ধতিতে ডাক্তার সাধারণত অ্যান্টিডিপ্রেস্যান্ট, সেডেটিভস দেন রোগীকে।

নন-বায়োলজিক্যাল ট্রিটমেন্ট
প্রথমে ডাক্তার কিছু রিল্যাক্সেশন টেকনিক দেখিয়ে দেন রোগীকে। এতে পেশীগুলোর সঞ্চালন সহজ হয়। এর পরের ধাপ হলো সিস্টেমেটিক ডিসেন্সেটাইজেশন। এতে যে পরিস্থিতিকে রোগী ভয় পায়, নিরাপদ ও নিয়ন্ত্রিতভাবে রোগীকে ধাপে ধাপে সেই পরিস্থিতির মুখোমুখি আনা হয়। ধীরে ধীরে রোগী তখন ভয়টা নিয়ন্ত্রণে আনতে পারে।
এ সব রকমের পদ্ধতিতে পরিবারের সবার সাহায্য খুব দরকার। অনেক সময় বাড়ির লোক, আত্মীয়স্বজন কো-থেরাপিস্ট হিসেবে কাজ করে।

তথ্যসূত্র: ডা. দেবাশিস রায়, কনসালটেন্ট সাইকিয়াট্রিস্ট, ভারত



মন্তব্য চালু নেই