অভিনয়ে কাঙ্গালিনী সুফিয়া

বাউল গানের রানী বলা হয় তাকে। দেশে বিদেশে ছড়িয়ে আছে তার অসংখ্য ভক্ত। সাধনা ও জীবন দর্শনে অনেকেই অনুসরন করেন তাকে। তিনি কাঙ্গালিনী সুফিয়া। এবার গানে নয়, অভিনেত্রী হিসেবে দর্শকের সামনে আসবেন বর্ষীয়সী এই শিল্পী।
‘শিল্পী’ নামের একটি নাটকে অভিনয় করবেন লোকগানের কিংবদন্তী শিল্পী কাঙালিনী সুফিয়া। তরুণ নির্মাতা জি এম সৈকতের এ নাটকে স্বচরিত্রেই অভিনয় করবেন তিনি। গল্পে দেখা যাবে, তার গানের টানেই কল্পনার রাজ্যে হারিয়ে যাবে নায়ক। বুঝতে পারবে, ক্ষণস্থায়ী এ দুনিয়ার রঙমহল। নাটকটি লিখেছেন পরিচালক জি এম সৈকত নিজেই। কাঙ্গালিনী সুফিয়া ছাড়াও নাটকে অভিনয় করবেন তিন প্রবীণ অভিনেত্রী রানী সরকার, রাণু দাশ এবং বনশ্রী। এছাড়াও অভিনয় করবেন তানভীর, স্নেহা, সাত্তার, ইসমত আরা লেমন, নাতাশাসহ আরও অনেকে। সাতক্ষীরার মোজাফফর গার্ডেনে মার্চ মাসের ১৭ তারিখ থেকে নাটকের শুটিং শুরু হবে।3 নাটক প্রসঙ্গে পরিচালক জিএম সৈকত বলেন, ‘একজন শিল্পী যখন তার ক্যারিয়ারে শীর্ষে থাকেন, তার জীবন যাপন ধ্যান ধারনা একরকম থাকে। কিন্তু বর্ণিল ক্যারিয়ার যখন রঙহীন হয়ে যায়, জীবনের করুণ পরিনতি মেনে নেওয়া যায় না। শোচনীয় জীবনের বাস্তবতা বোঝানোর জন্যই আমি এই নাটক নির্মাণ করবো।’ নাটকটি ঈদের আগেই বেসরকারি টেলিভিশন এটিন বাংলায় প্রচারিত হবে বলে জানিয়েছেন তিনি। এই প্রথম অভিনয় করছেন না কাঙ্গালিনী সুফিয়া। প্রায় বিশ বছর আগে তিনি ‘দেয়াল’ নামক নাটকে অভিনয় করেছিলেন। এরপর দীর্ঘ বিরতির পর  তিনি অভিনয় করেন ‘নোনাজলের গল্প’ নাটকে। কাঙালিনী সুফিয়ার ‘বুড়ি হইলাম তোর কারণে’ গানটি অবলম্বনে ‘নোনাজলের গল্প’ নাটকটি নির্মিত হয়েছিল। নাটকের প্রধান চরিত্র একজন বাউলের ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন ৫৪ বছর বয়সী এ শিল্পী। ১৯৬১ সালে রাজবাড়ী জেলার বালিয়াকান্দির অন্তর্গত রামদিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন সুফিয়া খাতুন। মাত্র ১৪ বছর বয়সে গ্রাম্য একটি অনুষ্ঠানে গান গেয়ে শিল্পী হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন তিনি। বাংলাদেশ টেলিভিশনের নিয়মিত শিল্পী হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার পর তৎকালীন বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমীর ডি.জি. জনাব মুস্তফা মনোয়ার তাকে ‘কাঙ্গালিনী’ উপাধি প্রদান করেন। সেই থেকে তিনি কাঙ্গালিনী সুফিয়া নামে পরিচিতি পান। কাঙ্গালিনী সুফিয়া ইংল্যান্ড, দক্ষিন কোরিয়া, কাতার, ইটালি, হংকং, যুক্তরাষ্ট্র, থাইল্যান্ড, চিন ও ভারতসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে গান পরিবেশন করেছেন। সঙ্গীতে তিনি এযাবৎ প্রায় ৩০টি জাতীয় ও ১০টি আন্তর্জাতিক পুরষ্কার লাভ করে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের ভাবমুর্তি উজ্জ্বল করেছেন। দেবেন থাপা, গৌর মোহন্তই তার গানের গুরু। ‘রাজ সিংহাসন’ নামে একটি চলচ্চিত্রে প্রথম কন্ঠ দেন তিনি।2

এ পর্যন্ত প্রায় ৫০০টি গান রচনা করেছেন তিনি। তার প্রধান বৈশিষ্ট্য হল- তিনি তাৎক্ষণিকভাবে গান রচনা ও সুর করে পরিবেশন করেন।গান তৈরি ও পরিবেশনের জন্য কোন প্রকার পূর্ব প্রস্তুতির প্রয়োজন হয় না। কাঙ্গালিনী সুফিয়ার বিখ্যাত কয়েকটি গান- ‘কোন বা পথে নিতাই গঞ্জে যাই’, ‘পরাণের বান্ধব রে, বুড়ি হইলাম তোর কারনে’, ‘নারীর কাছে কেউ যায় না’ ইত্যাদি। কাঙ্গালিনী সুফিয়া পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট একটি দল নিয়ে সঙ্গীত পরিবেশন করেন। এই দলের অন্যান্যরা হলেন- বাউল জাহাঙ্গির, বাউল মান্দের ফকীর, পুষ্প (বোন), চুমকী কাঙ্গালিনী (বড় মেয়ে)। কাঙ্গালিনী সুফিয়া বর্তমানে অসুস্থ হয়ে জীবনযাপন করছেন। তিনি চিকিৎসার জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে সাহায্য চেয়েছিলেন। প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্তে তাকে এককালীন ৫০,০০০/- টাকা এবং চিকিৎসা ভাতা হিসেবে মাসে ৫,০০০/-টাকা দেওয়া হয় সরকারের পক্ষ থেকে। 4



মন্তব্য চালু নেই