অভিজিৎ হত্যার দায় নিতে হবে খালেদাকে

বিজ্ঞানমনস্ক লেখক ও ব্লগার অভিজিৎ রায় দুর্বৃত্তদের হাতে খুন হওয়ার খবর শোনে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ছুটে আসেন অনেকেই। তাদের কেউ ছিলেন বাকরুদ্ধ, কেউ আবার ফেলেছেন চোখের পানি। কারণ স্বাধীন বাংলাদেশে এমন মৃত্যুকে কেউ মেনে নিতে পারেনি।

অভিজিৎ রায়ের মৃত্যুর পর তাকে দেখতে এসে ঢাকা মেডিকেলে অধ্যাপক ড. আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘সত্তোর-একাত্তোর সালের দিকে অজয় রায় স্যার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। আর ছেলে অভিজিৎ রায় ছিলেন মুক্তমনা লেখক। বর্তমানের দেশের এই হরতাল-অবরোধের সময় অভিজিৎ রায়ের মতো এরকম একজন মুক্তচিন্তককে হত্যা করা হলো। যার দায় বেগম জিয়াকে নিতে হবে। বিএনপি-জামায়াতই এর জন্য দায়ী।’

লেখক অভিজিৎ রায়ের বইয়ের পাঠক এবং তার পরিচিত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব) আশরাফ বলেন, ‘অভিজিৎ রায় আমেরিকায় কম্পিউটার সায়েন্সের শিক্ষক ছিলেন। তার অনেক বই আমি পড়েছি। আমি তার এই খবর শুনে খুবই হতাশ হলাম এবং আমরা আবারো প্রমাণ করলাম- আমরা আমাদের সম্পদের মূল্য দিতে জানি না।’ এরপর ব্রিগেডিয়ার আশরাফ ক্ষেপে গিয়ে কান্নাভেজা কণ্ঠে বলেন, ‘ব্লাডি খালেদা সবকিছুর জন্য দায়ী। সে মৌলবাদী জামায়াত-শিবির-হেফাজতকে পেট্রোনাইজ করে।’

গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ইমরান এইচ সরকার বলেন, ‘এটি পূর্ব পরিকল্পিত, দেশের প্রগতিশীল লেখকদের ধর্মীয় উগ্রবাদীরা সবসময় হুমকি দিয়ে আসছে। হুমায়ুন আজাদ স্যারের পর এখন অভিজিৎ রায়কে হত্যা একই সূত্রেগাঁথা। সরকার যথাযথ পদক্ষেপ না নিলে এদের সাহস আরো বেড়ে যাবে। জামায়াত-শিবিরের পৃষ্ঠপোষক এবং মৌলবাদীদের উৎস খোঁজে বের করে আইনের আওতায় আনতে হবে।’

এদিকে, বৃহস্পতিবার রাত পৌনে ৯টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি এলাকার বটতলায় বইমেলায় প্রবেশের নিরাপত্তা ফটকের সামনে দুর্বৃত্তদের অস্ত্রের আঘাতে নিহত হন মুক্তমনা ব্লগের প্রতিষ্ঠাতা অভিজিৎ রায় (৪০)। স্ত্রীসহ তিনি বইমেলা থেকে ফিরছিলেন। হামলায় তার স্ত্রী রাফিদা আহমেদও (৩৫) গুরুতর আহত হয়েছেন। তার অবস্থাও আশঙ্কাজনক।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বইমেলার সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে প্রবেশপথের কাছে রাজু ভাস্কর্যের দিকে বটগাছের তলায় এ হামলার ঘটনা ঘটে। কয়েকজন যুবক তাদের চাপাতি দিয়ে এলোপাতাড়ি কোপায়। এসময় তারা দাঁড় করিয়ে রাখা একটি মোটরসাইকেলের উপর পড়ে যান। দুর্বৃত্তরা চলে যাওয়ার সময় ওই মোটরসাইকেলের নম্বর প্লেটটিও খুলে নিয়ে গেছে।

অভিজিৎ রায় যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করতেন। এবার একুশের বইমেলায় তার দু’টি বই প্রকাশ হওয়ার কারণেই তিনি দেশে ফিরেন। ধর্ম নিয়ে লেখালেখির কারণে এর আগে বেশ কয়েকবার তাকে মৌলবাদীরা প্রাণনাশের হুমকি দেয়। এছাড়া মৌলবাদীদের হুমকির মুখে অনলাইন বুকশপ রকমারিও তার বই ‘বিশ্বাসের ভাইরাস’ প্রত্যাহার করে নেয়।



মন্তব্য চালু নেই