‘অব দ্য রেকর্ড’ আসিফ আকবর

শিশু থেকে কিশোর, কিশোর থেকে যুবক, যুবক থেকে পরিপূর্ণ পুরুষ হলাম। পুরুষ থেকে স্বামী, স্বামী থেকে বাবা, বাবা থেকে শিল্পী, আর শেষ পর্যন্ত শিল্পীই হয়ে গেলাম। মানুষ আর হতে পারলাম না! মানুষ হওয়ার কোনো রাস্তাও আমার সামনে খোলা নেই। কারণ আমি যে শিল্পী! মানুষ, গরু-ছাগল, বাঘ-সিংহ, তিমির মতো শিল্পীও যে একটা প্রজাতি! আমি সেই প্রজাতির একটা নমুনা! এভাবেই নিজের জীবনের কথাগুলো বলছিলেন শিল্পী আসিফ।

সাংবাদিক ও গীতিকার রাজিব আহমেদের পরিচালনায় আসিফ আকবরের জীবনী নিয়ে নির্মিত হয়েছে ‘অব দ্য রেকর্ড’। এ ফুলভার্সন ভিডিওতে আসিফের শৈশব কৈশোর, যৌবন,  শিক্ষা জীবন, প্রেম ভালোবাসা, সঙ্গীত এবং পারিবারিকজীবনসহ আরও নানা বিষয়ে কথা বলেছেন আসিফ নিজেই।

শিল্পীর হাসি-কান্না, সুখ-দুঃখের অনুভূতিগুলো বা মুহূর্তগুলো দেখার মহান দায়িত্ব নিয়েছেন সাংবাদিকরা। তারাও শিল্পীদের মতো আরেকটা প্রজাতি। তবে তারা অনেক রঙিন-লাল, সাদা, হলুদ আরও কত কি! তাদের কলমের খোঁচায় কারবালা হয় মুহূর্তে মুহূর্তে। তারা সবারটা ছেপে যায়, নিজেরটা চেপে যায়। শিল্পী আর সাংবাদিকের এই টম এন্ড জেরী খেলায় কে টম আর কে জেরী?
সবাই চলে যায়, শুধু শিল্পী মারা গেলেই নানা কথার শুরু হয়। শিল্পী কয়টা প্রেম করেছিলো, ইয়াবা খেতো না মদ খেতো? মরার স্টাইলটা কি ছিল?  যদি কোনোভাবে অপমৃত্যু হয় তাহলে তো কোন কথাই নেই! বিষয়টা তখন আরো রসালো, আরো জম্পেশ হয়। কয়টা বিয়ে করলো, বাবার অবস্থা কি ছিলো শিল্পী হওয়ার আগে? ফকির-মিসকিন ছিলো কি না? পুরো ময়না তদন্তে শিল্পীর শরীর, হৃদয়, মন ক্ষত-বিক্ষত না করা পর্যন্ত যেন শান্তি নেই কারো।

দুঃখিত, শিল্পীর আবার হৃদয়, মন কিসের?  ভুলেই গিয়েছিলাম, টাকা পাবে কাজ করবে! ব্যাস! কত কষ্টে জনগন শিল্পী বানিয়েছে, তারও তো একটা ফাইনাল একাউন্ট হবে। আর আছে শরীর, ওহ দুঃখিত, শরীর থাকলে বিভিন্ন যায়গায় ব্যাথা হতে পারে। আরও সমস্যা, শিল্পীদের তো ব্যাথা-বেদনা থাকতে নেই। আর ব্যাক্তি জীবন সে তো দুরের তারা! সবই ঠিক আছে। শিল্পীরা যে বিনয়ী, উদার, মহৎ হিসেবে সার্টিফিকেট পেয়েই গেছে, তাহলে এত কথা কিসের?

তাহলে আমি কি?  আমার বুকের ভেতর মাঝে মাঝে সুনামি, সিডর, আইলা কেন হানা দেয়?  বুকের ভেতরটা কেন দুমড়ে-মুচড়ে বেরিয়ে আসতে চায়?  কেন লাল টকটকে হৃৎপিণ্ডটা বেরিয়ে এসে প্রকাশ্য রাজপথে ছটপট করে না? আবারো ভুলে গিয়েছিলাম আমি যে শিল্পী!

শিল্পীর আবার শরীর, মন, হৃদয় কি?  আসিফ আকবর- ‘অব দ্য রেকর্ড’।

এই আমজনতাই ষষ্ঠবারের মতো আসিফ আকবরকে ২০১৩ সালের শ্রেষ্ঠশিল্পী নির্বাচিত করেছেন। অসংখ্য জনপ্রিয় গানের শিল্পী আসিফ আকবর। এ পর্যন্ত ২৯টি একক অ্যালবাম প্রকাশ পেয়েছে তার। মাঝে গান থেকে দূরে ছিলেন। ফিরেছেন আবার। তার গাওয়া ` ও প্রিয়া ও প্রিয়া তুমি কোথায়` গানটি ছিল জনপ্রিয়তার শিখরে। এই গানটির মাধ্যমেই তিনি দর্শক প্রিয়তা পান।

ঢাকা থেকে কুমিল্লা যাবার সময় একটা বিরতি নিচ্ছিলেন আসিফ। এমন সময় দূর থেকে একটা ট্র্যাক্টরে কিছু ছেলে পেলে দেখে আসিফ বললেন,  ‘এই যে ট্র্যাক্টর পার্টি আইসা গেছে, এইগুলো হলো আমজনতা বুঝছো! এরা আমারে ভালোবাসে আমারে খুঁজতে হলে ঘুরতে হবে। মানে আমজনতা দেখতে হবে। আর গুলশান, বনানী, বারিধারা, ডি ও এইস এস, ধানমণ্ডি এই কিছু এলাকায় হয়তো আমার একটা লিমিটেশন আছে, কিন্তু  বাকি দেশেই আমি আছি।’



মন্তব্য চালু নেই