অবৈধ বিদ্যুৎসংযোগে প্রাণহানির ঘটনা বৃদ্ধি পাচ্ছে বরিশালে

অবৈধ বিদ্যুৎসংযোগের কারণে সরকারের লাখ লাখ টাকা গচ্ছা গেলেও বরিশালের বিভিন্ন এলাকার বাসাবাড়িতে নানা প্রক্রিয়ায় ব্যবহার করা অবৈধ সংযোগকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারছেন না সংশি¬ষ্ট কর্মকর্তারা। আর এ সংযোগের কারনে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে প্রাণহানির ঘটনা বেড়েই চলেছে।

অভিযোগ রয়েছে অবৈধ সংযোগ ব্যবহারকারীদের কাছ থেকে প্রতিমাসে বিভিন্ন অংকের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন কতিপয় লাইনম্যান থেকে শুরু করে মিটার রিডিং লেখা কর্মচারীরা। যেকারনে বিষয়টি সংশি¬ষ্ট উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নজরে আসছেন না। সূত্রমতে, সর্বশেষ গত শনিবার সকালে গৌরনদী উপজেলার কমলাপুর গ্রামের শাজাহান মুন্সির সেচ প্রকল্পের বিদ্যুৎ লাইন থেকে অবৈধ সংযোগ নেয়ার সময় খাঞ্জাপুর পাঙ্গাশিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্র সাইফুল মৃধা বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে গুরুত্বর আহত হয়।

এরপূর্বে গত ২০ আগস্ট নিজের মাছের ঘেরে অবৈধভাবে সংযোগ দেয়ার সময় বিদ্যুতায়িত হয়ে মারা গেছেন বাকেরগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও দুধল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান খান নিজাম।

বাকেরগঞ্জ থানার ওসি আনোয়ার হোসেন জানান, হাবিবুর রহমান তার মাছের ঘের থেকে মাছ চুরি ঠেঁকাতে চারপাশে কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে তাতে বিদ্যুতের সংযোগ দেন। ওই তারে পা পড়ে বিদ্যুতায়িত হয়ে তিনি (হাবিবুর) মারা গেছেন। এরপূর্বে গত ২ জুলাই অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগের তার ছিঁড়ে পড়ায় গৌরনদীতে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে ঠান্ডু বেপারি ও সোনাজুল হাওলাদার নামের দু’ব্যক্তি মারা গেছেন। জেলার প্রতিটি উপজেলায় অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগে প্রাণহানির ঘটনা অহরহ ঘটছে।

পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির একটি সূত্রে জানা গেছে, ইরি-বোরো মৌসুমে জমিতে সেচের জন্য সেচ প্রকল্পের আওতায় জেলায় প্রায় দু’শতাধিক সেচ প্রকল্পে বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়া হয়। নিয়ম অনুযায়ী মৌসুম শেষ হলে প্রকল্প হস্তান্তর করে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার কথা থাকলেও মৌসুম শেষে এখনও দশ উপজেলার শতাধিক সেচ প্রকল্পে এখনো বিদ্যুৎ সংযোগ চালু রয়েছে। এসব সেচ প্রকল্পের মাধ্যমে জেলার উজিরপুর, গৌরনদী, আগৈলঝাড়া, মুলাদী, হিজলা, বাকেরগঞ্জ, বানারীপাড়া, বাবুগঞ্জ, মেহেন্দীগঞ্জ ও সদর উপজেলার শত শত বাড়িঘরে অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়া হচ্ছে।

স্থানীয়দের তথ্যমতে, গৌরনদীর খাঞ্জাপুর ইউনিয়নের কমলাপুর গ্রামের হারুন মুন্সির সেচ প্রকল্প থেকে প্রায় ৫০টি, আহম্মদ আলী সরদারের সেচ প্রকল্প থেকে ২৫টি ঘরে, জনৈক সেলিমের ঘর থেকে ৫টি বসত ঘরে অবৈধ সাইড লাইনের সংযোগ দেয়া হয়েছে। ওই গ্রামের বাসিন্দা আ. রহমান জানান, বিদ্যুৎ সংযোগের জন্য মাসে ৪ থেকে ৫’শ টাকা করে বিল দিতে হচ্ছে সেচ প্রকল্প মালিককে।

একইভাবে বরিশাল-ঢাকা মহাসড়কে গৌরনদী ও উজিরপুর উপজেলা অংশে ১৫টি বাসস্ট্যান্ডে এবং বিভিন্ন হাটবাজারে শত শত সাইড লাইনের সংযোগ রয়েছে। প্রায় প্রতিনিয়ত সাইড লাইন ব্যবহারকারী অসংখ্য বসত ঘর ও ব্যবসায়ীক প্রতিষ্ঠানে অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটেই চলেছে। এছাড়াও অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগের তার ছিঁড়ে পড়ায় গৌরনদীতে গত ২ জুলাই দু’জনের মৃত্যু হয়েছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি গৌরনদী ও উজিরপুর জোনাল অফিসের দায়িত্বপ্রাপ্ত এক কর্মকর্তা বলেন, মৌসুম শেষ হলেও তাদের আওতায় ৯৯টি সেচ প্রকল্পের মধ্যে এখনো ৭৫টি চালু রয়েছে। ওইসব সেচ প্রকল্পের মাধ্যমে বিভিন্ন গ্রামের বাড়িঘরে অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়া হচ্ছে। ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার জন্য গ্রামগঞ্জে মাইকিং, নোটিশ এবং জরিমানাও করা হয়েছে। একই ধরনের অভিযোগ রয়েছে মুলাদী, বাবুগঞ্জ, হিজলা, মেহেন্দীগঞ্জসহ অন্যান্য উপজেলায়। মুলাদী ও হিজলা পল-ীবিদ্যুৎ সমিতির ডিজিএম আনোয়ার হোসেন বলেন, তার আওতায় ৩৭ জনকে সেচ প্রকল্পের বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়া হয়েছে। এখনো ৭/৮টি সংযোগ চালু আছে।

এ ব্যাপারে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ এর জেনারেল ম্যানেজার মোবারক উল্যাহ বলেন, তার আওতায় ৬০জন সেচ প্রকল্পের গ্রাহক রয়েছেন। মৌসুম শেষ হলেও এখনো কিছু চালু রয়েছে। অবৈধসংযোগ ব্যবহারের বিষয়ে তারা কঠোর অবস্থানে থাকার কথা বলে তিনি আরও বলেন, অবৈধ সাইড লাইন বন্ধের জন্য জোনাল অফিসগুলোতে ইতোমধ্যে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।



মন্তব্য চালু নেই