পেট্রাপোলে যাত্রী হয়রানি

অবৈধ পথে যাতায়াত বাড়ছে

ভারতের পেট্রাপোলে বাংলাদেশি যাত্রীরা নানাভাবে হয়রানির শিকার হচ্ছেন। কাস্টমস ও পুলিশ ইমিগ্রেশনে হয়রানি ছাড়াও দালাল ও মাস্তানরা ভারতফেরত যাত্রীদেও কাছ থেকে মালামাল এবং টাকাপয়সা কেড়ে নিচ্ছে। এ ছাড়া প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধা না থাকার কারণেও এপারের যাত্রীরা নানাভাবে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন।

ভারত থেকে আসা যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এপার থেকে যাওয়া যাত্রীদের পেট্রাপোলে নানাভাবে হয়রানি আর ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে। যাওয়ার সময় আগে এপারে যাত্রীরা খুব সহজে নো-ম্যানস-ল্যান্ড অতিক্রম করতে পারতেন। কিন্তু এখন আর তা করা হচ্ছে না। কিছুসংখ্যক যাত্রীকে ওপারে ঢুকিয়ে নিয়ে গেট বন্ধ করে দিচ্ছে ওপারের কর্তৃপক্ষ।

এ সময় এপার থেকে যাওয়া যাত্রীদের অনেকক্ষণ নো-ম্যানস-ল্যান্ডে দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে। ওপারে পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা না থাকায় এপার থেকে যাওয়া যাত্রীদের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত খোলা স্থানে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে।

ভারত থেকে চিকিৎসা শেষে দেশে ফেরা যশোর জেলা ছাত্রদলের সভাপতি রবিউল ইসলামের সঙ্গে এ প্রতিবেদকের কথা হয়। তিনি জানান, এপারে ইমিগ্রেশনে অনেক জায়গা থাকায় যাত্রীরা অন্তত ছায়ায় বসে বা দাঁড়িয়ে থাকতে পারেন। কিন্তু পেট্রাপোলে সে সুবিধা নেই। এজন্য এপার থেকে যাওয়া যাত্রীদের ওপারের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত খোলা স্থানে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। এ অবস্থায় বয়স্ক, রোগী এবং নারী ও শিশুদের অনেক ভোগান্তি পোহাতে হয়। ঈদ ও পূজা উপলক্ষে বিপুলসংখ্যক বাংলাদেশি ভারতে যান। ওই সময় তাদের যে ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে তা চোখে না দেখলে বোঝা যাবে না।

ভারত থেকে আসা নাভারনের অলোক সরদার জানান, ওপারে বিভিন্নভাবেই এপারের যাত্রীরা হয়রানির শিকার হচ্ছেন। কাস্টমস ও ইমিগ্রেশনে কর্মরতরাও এপারের যাত্রীদের সঙ্গে নানা দুর্ব্যবহার এবং হয়রানি করছেন।

তিনি বলেন, আমি যেদিন ভারতে যাই, সেদিন বাংলাদেশি এক বৃদ্ধকে ওপারের ইমিগ্রেশন এপারে ফেরত পাঠায়। তাকে ভারত সফরে যেতে দেওয়া হয়নি। ভদ্রলোক রোগী এবং বয়স্ক হওয়ায় আমি তার পক্ষে একটু অনুরোধ করেছিলাম। তাতেই খেপে যান ইমিগ্রেশনে কর্মরতরা। তারা চুপ থাকার জন্য আমাকে শ্বাসিয়ে বলেন, আর একবার কথা বললে তাদের দুজনকেই আটক করে করাগারে পাঠানো হবে।

কয়েকজন যাত্রী অভিযোগ করেন, এর বাইরে রয়েছে দালাল আর মাস্তানদের অত্যাচার। ওপারে পৌঁছুলেই তারা ঘিরে ধরে। কাস্টমস ও ইমিগ্রেশনের কাজ করে দেওয়ার কথা বলে পাসপোর্ট ও ল্যাগেজ হাতিয়ে নেয়। তারপর নানাভাবে তাদের কাছ থেকে অর্থ আদায় করে। না দিতে চাইলে পাসপোর্ট আটকে রাখে, না হয় মূল্যবান মালামাল রেখে দেয়।

বৃহস্পতিবার দুপুরে ওপার থেকে বেনাপোল পৌঁছানো বাংলাদেশি যাত্রী বিক্রমপুরের বাসুদেব দাস জানান, তিনি কলকাতা থেকে পেট্রাপোলে পৌঁছুলে একদল দালাল তার পাসপোর্ট ও লাগেজ নিয়ে নেয়। এরপর একটি কক্ষে নিয়ে তার কাছে টাকা দাবি করেন। তিনি দিতে রাজি না হওয়ায় তার কাছে থাকা ভারতীয় ৩২০ রুপি তারা কেড়ে নেয়। অনেক অনুনয়-বিনয় করার পর তারা পাসপোর্টটি ফেরত দেয়।

অভিযোগ রয়েছে, পেট্রাপোল সীমান্তে ভারতীয় কাস্টমস ও ইমিগ্রেশনের হয়রানির হাত থেকে রক্ষা পেতে পুটখালী সীমান্তের চোরাপথ দিয়ে মানুষের যাতায়াত বেড়ে গেছে। আর এতে দুই দেশের সরকারই বিপুল পরিমাণ রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। আর এ কারণেই পেট্রাপোল সীমান্তে যাত্রী হযরানির ব্যাপারে দ্রুত সরকারকে সিদ্ধান্ত নেওয়ার দাবি জানানো হয়েছে।

এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে বেনাপোল চেকপোস্ট ইমিগ্রেশনের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আক্তারুজ্জামান জানান, ওপারের পেট্রাপোলে আমাদের মতো সুযোগ-সুবিধা নেই। তাই বাংলাদেশি যাত্রীদের সমস্যা হয়, এ কথা ঠিক। বর্তমানে প্রতিদিন দুই থেকে আড়াই হাজার কোনো কোনো দিন তার চেয়েও বেশিসংখ্যক যাত্রী ভারতে যাতায়াত করছেন। একসঙ্গে যখন বেশি যাত্রী ওপারে ঢুকে যাচ্ছে তখন বেশি সমস্যা হচ্ছে। যেহেতু সমস্যাটি ওপারের তাই আমাদের কিছু করার নেই।

এ ছাড়াও যাত্রীরা ওপারে হয়রানির শিকার হয়ে থাকলে তারা যদি লিখিত অভিযোগ করেন, তাহলে তা আমরা আমাদের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করব। এটা দুই দেশের উচ্চ পর্যায়ে আলোচনা হলে অবশ্যই ফল পাওয়া যাবে।



মন্তব্য চালু নেই