অবশেষে প্রিন্স মুসার বিরুদ্ধে দুদকের মামলা

সুইস ব্যাংকে জব্দ হওয়া ১২ বিলিয়ন ডলার (৯৩ হাজার কোটি টাকা) কিংবা গাজীপুরে ১ হাজার ২০০ বিঘা জমি সব ক্ষেত্রেই দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সঙ্গে প্রতারণা করেছেন রহস্যমানব মুসা বিন শমসের (প্রিন্স মুসা)।

বৃহস্পতিবার বিকেলে রাজধানীর রমনা থানায় দায়েরকৃত দুদকের মামলার এজাহারে এমনটিই বলা হয়েছে। দুদকে পেশ করা সম্পদ বিবরণীতে ওই সব সম্পদ থাকার ঘোষণা দেন প্রিন্স মুসা।

দুদকের মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, স্বঘোষিত ধনকুবের প্রিন্স মুসা গত ২৮ জানুয়ারি জিজ্ঞাসাবাদে সুইস ব্যাংকে জব্দ অর্থ, জমি ও অন্যান্য অর্থের রেকর্ডপত্র খুব দ্রুত সময়ের পেশ করার ওয়াদা করেন। কিন্তু প্রায় দেড় মাস অতিক্রম করলেও তিনি কোন নথিপত্রই পেশ করেননি। এমনকি এ নিয়ে কমিশন বা অনুসন্ধান কর্মকর্তার সঙ্গে তিনি যোগাযোগ করেননি। স্বাধীন কমিশন দুদকের সঙ্গে একজন অভিযুক্ত ব্যক্তির প্রতারণা করার কোন সুযোগ নেই। তিনি প্রতিশ্রুতি দিয়ে যথা সময়ে সেসব তথ্য-প্রমাণ পেশ করেননি।

এ বিষয়ে দুদক পরিচালক মীর জয়নুল আবেদীন শিবলী ও মামলার বাদি এজাহারে উল্লেখ করেছেন, মুসা বিন শমসেরের সুইস ব্যাংকে জব্দ হওয়া অর্থ নিয়ে আদালতে মামলা চলছে বলে তিনি জানিয়েছিলেন। তিনি এও জানিয়েছেন, মামলা নিস্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত কোন তথ্য জানানো যাবে না। এ ক্ষেত্রে তিনি সুইস ব্যাংকে জমানো অর্থের তথ্য না জানালেও মামলার নথিপত্রগুলো পেশ করতে পারতেন। তিনি তাও করেননি।

অথচ দুদকে পেশ করা তার সম্পদ বিবরণীতে তার নিজের ও এক পার্টনারের নামে সুইস ব্যাংকে ১২ বিলিয়ন ডলার জব্দ অবস্থায় আছে। আইন অনুযায়ি তার ওইসবের তথ্য প্রমাণ দেওয়ার কথা ছিল কিন্তু তিনি দেননি। তিনি আইন লংঘন করে মিথ্যার আশ্রয় নিয়েছেন। এ কারনে তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে।

এ বিষয়ে দুদক জানায়, গাজীপুর, সাভার এলাকায় তার নামে ১ হাজার ২শ’ বিঘা জমি আছে বলে সম্পদ বিবরণীতে উল্লেখ করেছেন। ওই জমির নথিপত্র চাওয়া হলে তাও দিতে ব্যার্থ হন। অনুসন্ধান করে ওইসব জমির কোন তথ্য পাওয়া যায়নি। এ ক্ষেত্রে তিনি মিথ্যা, ভিত্তিহীন তথ্য দিয়েছেন তিনি যা দুদক আইন পরিপন্থি।

সম্পদ বিবরণীতে আরো বলা হয়, সুইস ব্যাংকের ভল্টে আরো ৯০ মিলিয়ন ডলারের (৭১১ কোটি টাকা) স্বর্ণালঙ্কার, একটি ব্যাংক হিসাবে নগদ প্রায় এক লাখ টাকা জমা আছে। ওইসব সম্পদের বিপরীতে কোন নথিপত্র জমা দেননি। এমনকি মুসার সুইস ব্যাংকে জব্দ হওয়া অর্থের খোঁজ বাংলাদেশ ব্যাংকের বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্সটিটিউট ইউনিট (বিএফআইইউ) পায়নি।

তাই তার বিরুদ্ধে দুদক আইন-২০০৪ এর ২৬(২)(ক)(খ) ও ২৭(১) ধারা লংঘনের অভিযোগ আনা হয়েছে।

দুই বছরের বেশি সময় অনুসন্ধান, নানা নাটকীয়তার পর অবশেষে আর্ন্তজাতিক অস্ত্র ব্যবসায়ী ডেটকো (প্রা:) লিমিটেড ও মেসার্স ডেটকোর কর্ণধার, ধনকুবের মুসার বিরুদ্ধে অসত্য তথ্য দেওয়ার অভিযোগে মামলা করলো দুদক।

মুসার অবৈধ সম্পদের খোঁজে ২০১৪ সালের ১৮ ডিসেম্বর ও চলতি বছরের ২৮ জানুয়ারি জিজ্ঞাসাবাদ করে। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে অনেকটা গর্বের সঙ্গে সুইস ব্যাংকে জব্দ ১২ বিলিয়নসহ অনেক সম্পদ থাকার ঘোষনা দেন তিনি। এমনকি তিনি অঢেল সম্পদের দিকে ইঙ্গিত দিয়ে এও বলেছেন ‘আমি ধোলাইখাল থেকে পানি নিয়ে আটলান্টিক মহাসাগর গড়িনি।’

২০১৫ সালের ৭ জুন সম্পদ বিবরণী দাখিল করেন আলোচিত অস্ত্র ব্যবসায়ী মুসা বিন শমসের। ২০১৪ সালের ৩ নভেম্বর থেকে দুদকের জ্যেষ্ঠ উপপরিচালক (বর্তমানে পরিচালক) মীর মো. জয়নুল আবেদীন শিবলী অনুসন্ধানকাজ পরিচালনা করেন।



মন্তব্য চালু নেই