অবশেষে নূর হোসেনকে সম্পদের নোটিশ দিচ্ছে দুদক

অবশেষে নারায়ণগঞ্জের আলোচিত সাত খুন মামলার প্রধান আসামি নূর হোসেনের সম্পদের প্রকৃত তথ্য জানতে নোটিশ জারি করছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
দীর্ঘ এক বছরের বেশি সময় ধরে তার বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদের অনুসন্ধান করলেও ভারতে পলাতক থাকায় সম্পদ বিবরণীর নোটিশ জারি করতে পারেনি দুদক। ফলে অনুসন্ধান কাজ কার্যত বন্ধ ছিল।
২০১৪ সালের ১৯ মে অনুসন্ধান শুরু করার পর নূর হোসেনের নামে-বেনামে প্রায় ৮ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদের খোঁজ পায় সংস্থাটি। তারপরও কোনো ধরনের মামলা করা হয়নি। যদিও দুদকের অনুসন্ধান কর্মকর্তা মামলার সুপারিশ করে কমিশনে অগ্রগতি অনুসন্ধান প্রতিবেদন জমা দিয়েছিল। কিন্তু কমিশন থেমে অনুমতি মেলেনি।
সাত খুনের প্রধান আসামি নূর হোসেনকে কোনো ধরনের সম্পদ বিবরণী নোটিশ দেওয়া কিংবা জিজ্ঞাসাবাদ করা যায়নি বিধায় কমিশন মামলার অনুমতি দেয়নি। তবে এবারে নূর হোসেনকে দেশে ফিরিয়ে আনা হয়েছে। বর্তমানে কেন্দ্রীয় কারাগারে রয়েছে। তাই এবার সম্পদের নোটিশ দিতে আইনি কোনো বাধা নেই।
এ বিষয়ে দুদক চেয়ারম্যান মো. বদিউজ্জামান বলেন, ‘পলাতক ও বিদেশে আটক থাকার কারণে নূর হোসেনের বিরুদ্ধে দুদকের অনুসন্ধান কাজে স্থবিরতা দেখা দিয়েছিল। কিন্তু তাকে দেশে ফিরিয়া আনায় এবার অনুসন্ধান কাজে গতি আসবে।’
সম্পদ বিবরণী নোটিশের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘সম্পদ বিবরণী জারি করতে কিংবা জিজ্ঞাসাবাদে এখন আর কোনো বাধা নেই। তবে সম্পদ নোটিশের বিষয়ে আমি অবগত্ নই। এটা কমিশনার (অনুসন্ধান) ভাল বলতে পারবেন।’
তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে অন্য একটি সূত্র বলেন, দুদকের অনুসন্ধান কর্মকর্তা সম্পদ বিবরণী নোটিশ জারি করতে কমিশনের অনুমতি চেয়ে পুনরায় প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। কমিশনের অনুমতি সাপেক্ষে দুই একদিনের মধ্যে সম্পদ বিবরণী নোটিশ জারি করা হবে।
এখন পর্যন্ত অবৈধ সম্পদের বিষয়ে দুদকের অনুসন্ধান সূত্রে জানা যায়, দুদকের অনুসন্ধানে নূর হোসেনের মোট ৮ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ পাওয়া গেছে। এর মধ্যে নারায়ণগঞ্জে পাঁচতলা একটি বাড়ি এবং নূর হোসেন ও তার সন্তানদের নামে নারায়ণগঞ্জ-চিটাগাং রুটে চলাচলকারী এবিএস পরিবহনের লাক্সারি ৩০টি বাস পাওয়া গেছে। এসব গাড়ি নারায়ণগঞ্জ টু চিটাগাং রোডে চলাচল করলেও এখন বন্ধ রয়েছে। দুদকের অনুসন্ধানে ওইসব সম্পদের বৈধ কোনো উৎস পাওয়া যায়নি।
অন্যদিকে নূর হোসেনের আয়কর ফাইল অনুসারে তার মোট আয় দেখানো হয়েছে ১ কোটি ৭ লাখ টাকা। যেখানে আয়ের উৎস হিসেবে দেখানো হয়েছে বিভিন্ন জলাশয়ে মাছ চাষ। তবে আয়কর ফাইলে কোথাও তার বাড়ি কিংবা বাসের কথাটি উল্লেখ নেই।
এদিকে নারায়ণগঞ্জ ওয়ার্ড কমিশনার নূর হোসেনের সম্পদ অর্জনের বিষয়ে অভিযোগ রয়েছে, ১৯৮৬ সালে ট্রাকের হেলপার হিসেবে কর্মজীবন শুরু করলেও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের ছত্রচ্ছায়ায় কয়েক বছরে সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলেছেন তিনি। তার সম্পদের মধ্যে রয়েছে বেশ কয়েকটি বাড়ি, মাছের খামার এবং পরিবহন ব্যবসা। তার ছোবল থেকে বাদ যায়নি মসজিদের সম্পত্তিও।
অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, শিমরাইল মৌজায় ৩৭৩ নম্বর দাগে প্রায় ১১ শতাংশ জমির ওপর সাত কোটি টাকা ব্যয়ে পাঁচতলা বাড়ি নির্মাণ করেন নূর হোসেন। প্রকৃত জমির মালিক নাজির উদ্দিনের ছেলে আশ্রাব উদ্দিনকে ভয় দেখিয়ে মাত্র ২০ লাখ টাকায় হাতিয়ে নেন জমিটি।
মাত্র ১৭ লাখ টাকায় নারায়ণগঞ্জের লাল মিয়ার ছেলে আদম আলীকে ভয় দেখিয়ে শিমরাইল মৌজায় ৭২ ও ৭৩ নম্বর দাগে ১০ শতাংশ জমির ওপর পাঁচ কোটি টাকা ব্যয়ে ছয়তলার একটি বাড়ি নির্মাণ করেছেন নূর হোসেন।
এ ছাড়া রয়েছে শিমরাইল মৌজায় ৩১২ নম্বর দাগে ছয়তলা ভবন, রসুলবাগে সাড়ে আট কাঠা জমির ওপর সাততলা ভবন, সিদ্ধিরগঞ্জ মৌজায় ১০ শতাংশ জমির ওপর রয়েছে সাততলা নির্মাণাধীন ভবন। যার অধিকাংশই সরকারের জমি কিংবা অন্যের জমি দখল করে নির্মাণ করেছেন। নূর হোসেন রাজধানীর গুলশান-২-এ দুটি ফ্ল্যাট, বনানী ও ধানমন্ডিতে আরো দুটি ফ্ল্যাট রয়েছে।
দুদক সূত্রে আরো জানা যায়, নূর হোসেন কমপক্ষে ৫০ বিঘা জমির মালিক বলে অভিযোগ রয়েছে। যার অধিকাংশই দখল করা হয়েছে। শিমরাইলে তার বাড়ির পেছনে রয়েছে ৪০ বিঘার মৎস্য খামার। খামারের মালিকদের বঞ্চিত করে নূর হোসেন ১৫ বছর ধরে চাষ করেছেন। রয়েছে প্রায় ১০০ বছরের পুরোনো মসজিদ ভেঙে মাছের আড়ত স্থাপন করার অভিযোগ।
১৯৮৫ সালের ট্রাক হেলপার নূর হোসেন ১৯৮৭ সালে ট্রাক ড্রাইভার। ১৯৯১ সালে ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান। ২০১২ সালে কাউন্সিলর হন।
কঠোর নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে গত ১২ নভেম্বর ভারত সীমান্ত থেকে বেনাপোল সীমান্ত দিয়ে নূর হোসেনকে দেশে ফিরিয়ে আনা হয়। এর পরের দিন হাজির করলে আদালতের নির্দেশে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয় তাকে। তার বিরুদ্ধে ছয়টি হত্যা মামলাসহ ২৩টি মামলা রয়েছে।
নূর হোসেনের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগটি অনুসন্ধান করছেন দুদক উপপরিচালক জাহাঙ্গীর আলম।



মন্তব্য চালু নেই