অপহরণ পরিকল্পিত, এখনো মুক্তিপণ চাওয়া হয়নি

বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান জানিয়েছেন,স্বামী আবু বকর সিদ্দিকের মুক্তিপণ চেয়ে কোনো ফোন আসেনি। সুতরাং পরিবেশবিদ হিসেবে তার কাজের জন্য যারা ক্ষুব্ধ হয়েছেন তারাই স্বামীকে অপহরণ করেছে বলে তিনি দাবি করেন।
বৃহস্পতিবার বিকেলে মহাখালীর ব্র্যাক সেন্টারে সুশীল সমাজ আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা জানান। ‘উদ্বিগ্ন নাগরিকবৃন্দ’র ব্যানারে আয়োজিত এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
রিজওয়ানা বলেন, ‘আমার স্বামীর কোনো শত্রু নেই। আমার যেটা ধারণা, আমার পেশাগত কারণেই তাকে অপহরণ করা হতে পারে। কারণ আমি পরিবেশ ও মানুষের অধিকার নিয়ে সব সময় সোচ্চার ছিলাম। এ কারণেই মাঝে মধ্যে কেউ কেউ আমার ওপর নাখোশ হতেন। আবার অনেকেই আমার কর্মকাণ্ডে অভিনন্দনও জানাতেন।’
তিনি আরো বলেন, ‘বেশ কয়েক জন আমাকে মোবাইল ফোনে স্বামীর সন্ধানের জন্য কিছু লোককে ধরতে বলেন। অথচ তারা যাদের নাম বলেন তারা উল্লেখযোগ্য কেউ নন। আমি বিষয়টি এখনো পুরোপুরিভাবে বুঝে উঠতে পারছি না।’
স্বামীকে উদ্ধারের বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ভূমিকার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমি এখনো আশা ছাড়িনি। আমি আশান্বিত যে তিনি (তার স্বামী) আমার পরিবারের মাধ্যে সুস্থ অবস্থায় ফিরে আসবেন।’ এজন্য তিনি এবি সিদ্দিককে দ্রুত উদ্ধারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
তিনি বলেন, ‘সরকার ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা যথেষ্ট আন্তরিক। তারা আমাকে সহযোগিতা করছেন। তবে ২৪ ঘণ্টা পার হয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত দৃশ্যমান কোনো খবর পাইনি। তবও আমি হতাশার কিছু দেখছি না।’
অনুষ্ঠানে সুলতানা কামাল বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যদি তাকে উদ্ধারে ব্যর্থ হয় তাহলে এর জবাব তাদেরকেই দিতে হবে।’
তিনি আরো বলেন, ‘বর্তমান সরকার নিজেদেরকে গণপ্রতিনিধিত্বশীল ও গণতান্ত্রিক বলে দাবি করে। কিন্তু এমন ঘটনা এ দাবিকে প্রশ্নের মুখে ফেলবে। আবু বকরকে উদ্ধার করতে পারলে সে অভিযোগ থেকে রক্ষা পাবে সরকার।’
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘আমরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। আমরা আমাদের স্বজনকে ফেরত চাই।’
সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন- অধ্যাপক আনিসুজ্জামান, সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার, বিশিষ্ট কলামিস্ট আবুল মকসুদ, আইন ও সালিশ কেন্দ্রের নির্বাহী পরিচালক সুলতানা কামাল, সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা হোসেন জিল্লুর রহমান, হামিদা খানম, প্রকৌশলী ইকবাল হাবিব, অধ্যাপক মঞ্জুরুল ইসলাম, নারীনেত্রী খুশী কবির, সাদেকা হালিম, সৈয়দ জাকির হোসেন প্রমুখ।
উল্লেখ্য, গতকাল বুধবার বিকেল সোয়া ৩টায় আবুবকর তার প্রাইভেটকারে করে নারায়ণগঞ্জ থেকে ঢাকায় আসছিলেন। ফতুল্লার ভূইয়া ফিলিং স্টেশনের সামনে আসা মাত্র একটি হাইয়েস গাড়ি দিয়ে তার পথরোধ করা হয়। পরে ওই গাড়ি থেকে ৭ থেকে ৮ জন যুবক লাঠিসোটা ও অস্ত্রের মুখে এবি সিদ্দিককে তুলে নিয়ে যায়।
এদিকে বাংলাদেশের জাহাজভাঙা শিল্পের বিরুদ্ধে বেলার প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানা প্রথম সোচ্চার হন। বিষয়টি তিনি আদালত পর্যন্ত নিয়ে যান। অবশ্য সরকার শেষ পর্যন্ত একে শিল্প হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। এ শিল্পের বিরোধিতা করতে গিয়ে সৈয়দা রিজওয়ানা নানাভাবে হয়রানিরও শিকার হন।
এছাড়া সুন্দরবন সংলগ্ন এলাকায় কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনেরও ঘোর বিরোধী তিনি। কিন্তু সরকার এ আমলেই সেখানে বিদ্যুৎকেন্দ্র করার বিষয়টিকে প্রাধান্য দিচ্ছে বলে ঘোষণা দিয়েছে।



মন্তব্য চালু নেই