অপর্যাপ্ত ভ্রাম্যমাণ আদালত, অপ্রতিরোধ্য বাস ভাড়া

রাজধানীতে চলাচলরত বাস-মিনিবাসগুলোতে ইচ্ছেমতো বাড়তি ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। গণপরিবহণে বাড়তি ভাড়া আদায় বন্ধে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহণ কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ)ভ্রাম্যমাণ আদালতের সংখ্যা অপর্যাপ্ত। ফলে ফ্রি স্টাইলে বাড়তি ভাড়া আদায় করা হচ্ছে বাস-মিনিবাসে।

ঢাকা ও এর আশপাশের পাঁচ জেলা এবং চট্টগ্রাম মহানগরীতে চলাচলকারী বাস-মিনিবাসের নতুন বর্ধিত ভাড়া গত বৃহস্পতিবার (১ অক্টোবর) থেকে কার্যকর হয়েছে। তবে বিআরটিএর তালিকার চেয়ে বেশি ভাড়া আদায় করছে রাজধানীর পরিবহণগুলো। এর মধ্যে লোকাল গাড়িগুলোর মধ্যে এ প্রবণতা বেশি দেখা যাচ্ছে।

এ নিয়ে চিন্তিত খোদ প্রশাসনও। রোববার সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের কোনোরকম ঘোষণা ছাড়াই বিআরটিএর তিনটি ভ্রাম্যমাণ আদালত নিয়ে অভিযান চালান। এদিন রাজধানীর মানিক মিয়া এভিনিউতে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়, ভাড়ার তালিকা বাসে সংরক্ষণ না করা, অবৈধ ও মেয়াদোত্তীর্ণ ড্রাইভিং লাইসেন্স এবং ফিটনেসবিহীন গাড়ি চালানোর অভিযোগে ঢাকা মহানগরীতে বিভিন্ন যানবাহনের বিরুদ্ধে ৫৪টি মামলাসহ ৬৪ হাজার ৭০০ টাকা জরিমানা আদায় করেন।

এর পর প্রতিদিন তিনটি করে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হচ্ছে রাজধানীতে। কিন্তু যাত্রীরা মনে করেন, এতে পরিবহণ ব্যবসায়ীদের সিদ্ধান্তে কোনোরকম প্রভাব পড়ছে না। কারণ, একটি অংশে অভিযান চললে অপর অংশ ঠিকই ফাঁকা থাকছে। বাস-মিনিবাসে ঠিকই বাড়তি ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। কারণ সীমিত পরিসরে অভিযান চালিয়ে রাজধানীর বিভিন্ন রুটের অসংখ্য গাড়ির নৈরাজ্য বন্ধ করা সম্ভব নয়।ফলে যাত্রীরা অনেকটা জিম্মি হয়েই বাড়তি ভাড়া গুনছেন।

কিন্তু এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটির (বিআরটিএ) পরিচালক (এনফোর্সমেন্ট) বিজয় ভূষণ পাল। তিনি বলেন, রাজধানীর তিনটি স্পটে রোববার থেকে প্রতিদিনই অভিযান চলছে। অভিযানে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় এবং ভাড়ার তালিকা বাসে সংরক্ষণ না করলে জরিমানা ও মামলা করা হচ্ছে। একই সঙ্গে অভিযানে ড্রাইভিং লাইসেন্স এবং ফিটনেসও চেক করা হচ্ছে।

তিনি জানান, আজও (বুধবার) রাজধানীর তিনটি স্পটে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান চলছে। সকাল থেকে আগারগাঁও, কাকলী এবং ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সাইনবোর্ড এলাকায় অভিযান চলছে। এর মধ্যে সাইনবোর্ড এলাকায় অভিযান পর্যবেক্ষণে যান মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।

বিজয় ভূষণ পাল আরো বলেন, ‘প্রয়োজন হলে শনিবারও বিআরটিএ অভিযান পরিচালনা করতে প্রস্তুত আছে।’

নিয়ম অনুযায়ী, প্রতিটি বাস-মিনিবাসে ভাড়ার তালিকা দৃশ্যমানভাবে ঝুলিয়ে রাখতে হবে। কিন্তু সরকারি নির্দেশনার ছয় দিন পার হলেও এখনো সব বাস-মিনিবাসে নতুন ভাড়ার তালিকা টাঙানো হয়নি।

এ বিষয়ে বেসরকারি সংস্থায় কর্মরত আসিফ আহমেদ নামের এক যাত্রী বলেন, এদেশে যখনই কোনো নিয়ম করা হয়, সেটা অমান্যের প্রবণতাই বেশি হয়। কারণ সরকার আইন বা বিধিবিধান করেই ক্ষান্ত হয়। সেটা কেউ মেনে চলছে কি না সে বিষয়ে নজরদারি করে না। এখানেও তাই হচ্ছে। সরকার ভাড়া বাড়াতে বলেছে, এরা (গাড়ির কন্ট্রাক্টর) বেশি নিচ্ছে। তাদের তো সাজা দেওয়া হচ্ছে না।

তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, ‘আপনি যদি রেফারি না রাখেন, তাহলে খেলোয়াড়রা ফাউল করবে না কেন?’

আরিফ রহমান নামের এক যাত্রী জানান, গাবতলী থেকে মহাখালী পর্যন্ত তিনি নিয়মিত ১৫ টাকা ভাড়া দিয়ে যাতয়াত করতেন। কিন্তু এখন ২০ টাকা করে ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। অথচ এ পথের দূরত্ব ৮ কিলোমিটার। ১০ পয়সা করে প্রতি কিলোমিটারে বাড়লে ৯ কিলোমিটারে ৯০ পয়সা বা ১ টাকাসহ বর্ধিত ভাড়া হবে ১৬ টাকা। কিন্তু বর্ধিত ভাড়ার পাঁচগুণ আদায় করা হচ্ছে।

তিনি বলেন, আমরা যে বাড়তি ভাড়া নেওয়ার বিষয়ে কাউকে অভিযোগ করব, সে সুযোগও তো নেই। সরকারের উচিত ছিল প্রথম দিকে অন্তত একটা মাস মোবাইল কোর্ট রাখা, বাড়তি ভাড়া আদায় করা হচ্ছে না কি তা তদারকির জন্য।

গ্যাসের দাম বৃদ্ধির কারণে ব্যয় বিশ্লেষণ করে এ ভাড়া নির্ধারণ করে সড়ক পরিবহণ ও মহাসড়ক বিভাগ। আগে কিলোমিটার প্রতি বাসে ১ টাকা ৬০ পয়সা ও মিনিবাসে ১ টাকা ৫০ পয়সা ভাড়া নির্ধারিত ছিল।

রাহাত নামের অপর এক যাত্রী অভিযোগ করেন, সরকার প্রতিবার বলে ভাড়া বাড়লে এতে তেমন কোন প্রভাব পড়বে না। তবে প্রতিবছরই বাসের মালিকরা ভাড়া বাড়িয়ে দেয়। সরকার কেন এসব নজরদারি করছে না। এভাবে আর কতদিন বাসের মালিকদের কাছে জিম্মি থাকতে হবে আমাদের?

এদিকে সিএনজি অটোরিকশার নতুন ভাড়া কার্যকর হবে আগামী ১ নভেম্বর থেকে। যাত্রীরা আশঙ্কা করছেন, তখন আরো বেশি নৈরাজ্য হবে। কারণ এখন বাস-মিনিবাস বাড়তি ভাড়া নিয়ে পার পেয়ে যাচ্ছে, সিএনজি তো আগে থেকেই বেশি ভাড়া নিয়ে আসছে। এবার তারা আরো বেপরোয়া হয়ে যাবে।

এ জন্য সরকারের আরো বেশি ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করার পাশাপাশি শিগগিরই এ বিষয়ে নতুন নির্দেশনা দেওয়া উচিত বলে মনে করেন যাত্রীরা। রাইজিংবিডি



মন্তব্য চালু নেই