অপরাধীদের জন্য মায়াকান্না কেন?

অপরাধীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিলে একটা শ্রেণী আছে তাদের জন্য মায়াকান্না করে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, ‘একটা মানুষের জন্য যদি ৫০টা মানুষ বাঁচানো যায়। তো কোনটা সঠিক হবে? এই ৫০টা মানুষকে বাঁচানো নাকি ওই অপরাধীকে বাঁচিয়ে আরও ৫০ মানুষকে হত্যা করার সুযোগ করে দেওয়া?’

বুধবার (১৫ এপ্রিল) গণভবনে লেখক, সাংবাদিক, কলামিস্ট ও টকশো’র আলোচকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘মাঝে মধ্যে আমি অদ্ভূত একটা বিষয় দেখি যারা ক্ষতিগ্রস্ত, নিহত তাদের জন্য দুঃখ নেই; দুঃখ হলো যারা অপরাধী তারা কেন মারা গেলো। আমাদের দেশে অপরাধীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিলে একটা শ্রেণীর কাছে তা মানবাধিকার লঙ্ঘন হয়!’

তিনি আরও বলেন, ‘কেউ যদি অপরাধ করে পুলিশের তো রাইট আছে মানুষের জান-মাল বাঁচানো। আর মানুষের জীবন বাঁচানোর জন্য যেটা দরকার সেটা করতে হবে। আমরা বাধ্য হয়েছি পুলিশকে সেই নির্দেশ দিতে। আমরা স্পষ্ট বলেছি যে, অস্ত্র পকেটে রেখে দেওয়ার জন্য নয়, অপরাধীকে দমন করার জন্য। অপরাধীকে দমন করতেই হবে।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘যারা আগুনে পুড়ে গেলো অথবা পোড়া ঘা নিয়ে এখনো মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছে, যাদের পরিবার ধ্বংস হয়ে গেছে তাদের জন্য যতটা চিন্তা, তার চেয়ে যারা এ অঘটন ঘটাতে গেছে, ঘটাতে গিয়ে তাদের ওপর আঘাত এসেছে অথবা মারা গেছে সেই অপরাধীদের জন্য যত মায়া। কিন্তু কেন?’

সব যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ও রায় কার্যকরের দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা ইতোমধ্যে দুটি রায় কার্যকর করেছি। আমরা বাকিগুলো কার্যকর করব। যত বাধাই আসুক এটা আমরা করব।’

যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের রায় কার্যকরের বিরুদ্ধে বাইরের শক্তির অবস্থানের সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ফাঁসির ব্যাপারে আজকে আর্ন্তজাতিকভাবে এত কিছু বলা হয়। ফাঁসি কি হচ্ছে না? ফাঁসি কি হয়নি? ঈদের দিন সাদ্দামকে ফাঁসি দেওয়া হলো। সাদ্দামের ফাঁসি দেখে তারাই আবার হাত তালি দেয়। সাদ্দাম যে অপরাধ করেছে, ৭১-এ মানবতাবিরোধী অপরাধীরা তার চেয়ে জঘন্য অপরাধ করেছে।’

‘এই লাদেন, সাদ্দাম, গাদ্দাফিকে কারা সৃষ্টি করেছে, কারা মেরেছে, কারা মেরে আবার খুশি হচ্ছে। তারা অপরাধ করলে তাদের শাস্তি দেওয়া যাবে, আমার দেশে যারা একই অপরাধ করেছে তাদের শাস্তি হলে কেন মানবাধিকার লঙ্ঘন হবে?’, যোগ করেন প্রধানমন্ত্রী।

মানবতাবিরোধীদের বিচারের রায় কার্যকর না করতে, ফাঁসি না দিতে অনেক উঁচু জায়গা থেকে অনুরোধ করা হয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যারা মানবাধিকার লঙ্ঘন করবে তাদের মানবাধিকার রক্ষা করতে হবে কেন?’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘অনেক সময় দেখি যারা মারা গেলেন, যারা নির্যাতিত হলেন, যারা ক্ষতিগ্রস্ত হলেন, তাদের কথা চিন্তা না করে; যারা ক্ষতি করছে, যারা মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছে, সেই মানবাধিকার লঙ্ঘনকারীদের মানবাধিকার নিয়ে সবাই খুব সোচ্চার হয়ে পড়েন।’

‘মানবাধিকার লঙ্ঘনকারীর মানবাধিকার নিয়ে সবাই ব্যস্ত। কিন্তু যে আপনজন হারা সে বোঝে ব্যথাটা কোথায়। এ একটা অদ্ভুত বিষয় আমি দেখি, অপরাধীদের জন্য তাদের মায়াকান্না।’

এ সময় মঞ্চে আরও উপস্থিত ছিলেন, তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, প্রধানমন্ত্রীর তথ্য বিষয়ক উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী, বাংলা একাডেমির সভাপতি প্রফেসর অ্যামিরিটাস আনিসুজ্জামান, বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক শামসুজ্জামান, উপন্যাসিক সেলিনা হোসেন, সাংবাদিক গোলাম সারওয়ার প্রমুখ।

প্রধানমন্ত্রীর সূচনা বক্তব্যের পর উপস্থিত লেখক, সাংবাদিক, কলামিস্ট ও টকশো’র আলোচকরা বিভিন্ন বিষয়ে তাদের মতামত তুলে ধরেন।



মন্তব্য চালু নেই