অন্য নারীর সঙ্গে স্বামীর সম্পর্ক থেকে যা শিখেছি আমি

সম্পর্ক বিষয়ে মানুষের কতই না সমস্যা থাকে। এমনই নিজের অভিজ্ঞতা জানাচ্ছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক নারী। তার অভিজ্ঞতা অনেকের জীবনের জন্য পরামর্শ হতে পারে। তার স্বামীর বিবাহবহির্ভূত অনৈতিক সম্পর্ক থেকে তিনি কি শিখেছেন, তাই জানাচ্ছেন এখানে।

তিনি বলছেন, এতদিন পর্যন্ত জানতাম আমার বিবাহিত জীবনটা অনেক সুখের। ১৫ বছরের সম্পর্ক আমাদের। তিন সন্তান ঘরকে আলো করে রাখে। সে আমার প্রতি যথেষ্ট দয়াশীল। যথেষ্ট সম্মান করে। তাকে নিয়ে আমি যথেষ্ট সুখী। তার মতো স্বামী পেয়ে আমি আসলেই নিজেকে ভাগ্যবতী মনে করি। সে এমন এক মানুষ যে কিনা আমাদের সবার ভার নিজের কাঁধে নিয়েছে।

তাই বলে যে আমাদের দাম্পত্য কলহ হয় না, তা নয়। কম বয়স থেকেই আমার রাগ অনেক বেশি। অল্পতেই নিয়ন্ত্রণ হারাই। সে তার কিছু ভাবনাকেই সঠিক বলে মনে করত। অনেক সময় আমারগুলোকে খাটো করে দেখত। আর এতেই আমার যত সমস্যা। দুই দিন কথা না বলে থাকতাম। এতে সেও কষ্ট পেত।

আমি কথা না বলে থাকলে তার বাবার কথা মনে পড়ত। তার ছোটকালে বাবা তাকে মোটেও ভালোবাসা দিতেন না। বাবা ভালোবাসতেন তার মেয়েকে। তবে তার মা মাঝে মাঝে সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করতেন। আমি রাগ করলে যে স্বামীর বাবার কথা মন পড়ত তা জানতাম। তাই রাগ ভুলে যাওয়ার চেষ্টা করতাম। কিন্তু কখনো সফল হতাম না।

তবে সে আমার প্রতি যথেষ্ট ধৈর্যবান। আর বড় ছেলের প্রতি কঠোর। তাকে দেখলে মাঝে মাঝে শ্বশুরের কথাই মনে হয়। তবে মেয়েটার সঙ্গে সব সময় নরম স্বভাবের আচরণ করে।

একবার এক পারিবারিক ভ্রমণের পর সে কেমন যেন হয়ে গেল। ভেবেছিলাম ভ্রমণ ও কাজের ক্লান্তি ভর করেছে। হয়ত দুই দিন অফিস করলেই সব ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু এক রাতে সে নিজেই আমাকে জানাল যে, গত দুই মাস ধরে সে একটা প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে। কয়েক মিনিট আমি স্তব্ধ হয়ে বসে থাকলাম। বোধশক্তিহীনের মতো কেবল বললাম, ভালো। পরের সময়গুলো কিভাবে কেটেছে জানি না। আমি বিধ্বস্ত হয়ে পড়েছিলাম। একদিন সে আমাকে ওই মেয়েটির স্বামীর নম্বর দিয়ে তার সঙ্গে কথা বলতে বলল। আমি ওই লোকটির সঙ্গে কথা বললাম। সম্পর্কের শুরু অনলাইনে। পরে ফোনেও কথা হতো। বছরখানেক আগে মেয়েটি স্বামীর অফিসেই কাজ করত। তখন স্বামী অবিবাহিত ছিল। তাদের প্রেম হয়েছিল। তা টিকে ছিল ৫ বছর। ই-মেইলের মাধ্যমে তাদের প্রেমের বহু তথ্য মেয়েটির স্বামী আমাকে দিয়েছিলেন।

তবে স্বামী তার পুরনো প্রেমের বিষয়টি অনেকভাবে চাপা দেওয়ার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু ই-মেইলগুলো সব জানিয়ে দেয়। আমার মনে হচ্ছিল, কেউ আমার পিঠে ছুরি চালিয়েছে। এগুলো কেলেঙ্কারির মতো যা সাধারণত সেলিব্রিটিদের ঘটে। আমরা এগুলো পত্রিকায় পড়ি। আমি বুঝতে পারছিলাম না যে, সে কি আমাকে নিয়ে সুখী ছিল না? তাকে অন্য কাউকে কেন বেছে নিতে হলো?

এসব ঘটনা ঘটেছে মাস পেরিয়েছে। এখনো এর যন্ত্রণা থেকে বেরিয়ে আসতে পারিনি। বুঝতে পারি না, আমার জীবনে কেন এমন ঘটল? হয়ত জীবনের সব রাগ সে আমার ওপর ঢেলে দিয়েছে এমনটা করে। আমার স্বামীও এরপর থেকে চুপচাপ থাকে। সে আমার মতোই যন্ত্রণা ভোগ করে চলেছে। সেও নাকি চিন্তা করে, কেন এসব ঘটল তার জীবনে? ছোটকালে বাবার অত্যাচারের কারণেই তার জীবনে এমন নানা পরিবর্তন ঘটে চলেছে। সে একটা নিখুঁত বিয়ে ও সংসার চাইছিল। কিন্তু তা হয়নি। তবে আমাদের বিয়েটা ছিল অন্য সবার মতো সাধারণ বিয়ে। সংসার শুরু করেছি যেখানে ভালোবাসা ও বিবাদ ছিল।

এখন আমরা দুজন মিলে ভাবতে থাকি, আমাদের জীবনে কেন এমন ঘটল? এসব কথা ভুলে গিয়ে সামনে এগিয়ে যাওয়া একটা সময়ের ব্যাপার মাত্র। কিন্তু এ সমস্যাগুলো মিটিয়ে যদি আবারো নতুন করে শুরু করা যায়, তবে আমাদের সম্পর্কে আগের চেয়ে আরো গভীর হয়ে উঠবে। বাচ্চাদের জন্য আবারো নতুন করে সব আয়োজনে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে একযোগে। এখন সন্তানদের এমন জীবন দিতে হবে যার স্মৃতি ভবিষ্যৎ জীবনটাকে সুখী করে তোলে।
সূত্র : টাইমস অব ইন্ডিয়া



মন্তব্য চালু নেই