অন্যরকম মেয়ে

তার পিঠে ঢাউস বস্তা। প্রতিদিন সকালে রাস্তা থেকে কাগজ কুড়ানোই তার কাজ। অভাবের সংসারে বাবা-মাকে সাহায্য করতে এ কাজ করছে ১১ বছরের মেয়েটি। পড়াশোনা শেখেনি। শুধু জেনেছে, পড়ে থাকা টাকা নিতে নেই। আর তাই শনিবার কাগজ কুড়াতে বেরিয়ে রাস্তায় পড়ে থাকা ২২ হাজার টাকা পেয়েও সে বাড়ি নিয়ে আসেনি। জমা দিয়ে এসেছে থানায়। অন্যরকম এই মেয়েটির নাম আসমিন খাতুন।

পশ্চিমবঙ্গের হুগলির পান্ডুয়া রেলস্টেশনের ধারের একটি ঝুপড়ির বাসিন্দা। মাত্র বছর এগারোর আসমিনের এই সততা দেখে আপ্লুত থানার অফিসার থেকে গ্রামবাসী সকলেই। খবর আনন্দবাজার পত্রিকার।

হুগলির পুলিশ সুপার সুনীল চৌধুরী বলেন, ‘মেয়েটি যে সততার পরিচয় দিয়েছে, তা প্রশংসনীয়। ওকে পুরস্কৃত করার ব্যাপারে ভাবনাচিন্তা করা হচ্ছে।’ পান্ডুয়া বইমেলা কমিটির তরফে জানানো হয়েছে, কিছুদিন পরেই মেলা শুরু হবে। মেলার মঞ্চে তারাও মেয়েটিকে পুরস্কৃত করবে।

আর এ ব্যাপারে লাজুক মেয়েটির বক্তব্য একটিই- ‘কাগজ কুড়াই। কিন্তু টাকা পেলে তো নিতে নেই, তাই ফিরিয়ে দিয়েছি।’ প্রতিদিন সকালে কাগজ কুড়াতে বস্তা নিয়ে বেরিয়ে পড়ে আসমিন। বস্তা বোঝাই করে দুপুরে সে বাড়ি ফেরে। শনিবারটা অবশ্য ছিল অন্যরকম। সে এ দিন বেলা ১২টা নাগাদ রাস্তার পাশে ঝোপের ধারে টাকার বান্ডিলটি চোখে পড়ে তার। বান্ডিলটি হাতে তুলে নেয়।

২২ হাজার টাকার প্রতিটি নোটই ছিল এক হাজারের। টাকার অঙ্ক নিয়ে আসমিনের বিশেষ ধারণা নেই। কিন্তু তার মনে হয়েছিল, ওই টাকা নিরাপদ জায়গায় পৌঁছানো দরকার। বিষয়টি সে দু-একজন গ্রামবাসীকে জানায়। এর পরে গ্রামবাসীদের সহায়তায় সোজা থানায় চলে আসে। মেয়েটির মুখে সব শুনে পুলিশ কর্মীরা থ হয়ে যান। এর পরে পান্ডুয়া থানার ওসি সুমন রায়চৌধুরীর হাতে ওই টাকা তুলে দেয় আসমিন। সুমনসহ থানার অন্য অফিসাররা আপ্লুত হয়ে পড়েন। পুলিশ তাকে কেক-বিস্কুট খাওয়ায়।

একজন গ্রামবাসী বলেন, ‘মেয়েটি টাকা হাতে ঘোরাঘুরি করছে শুনে দু-একজন পরিচিতকে বলি ওকে সাহায্য করতে। ও খুব ভালো একটা উদাহরণ তৈরি করল।’ পান্ডুয়া বইমেলা কমিটির সভাপতি জামালউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘মেয়েটি আজ যা করল তা শিক্ষণীয়।’ লোকজনের হাজারো প্রশংসাতেও অবশ্য পিঠের বস্তাটি একবারের জন্যও হাতছাড়া করেনি আসমিন।



মন্তব্য চালু নেই