অনেক মানুষ রেখে মশা আপনাকে বেশি কামড়ায় কেন? জেনে নিন

অনেক মানুষের মাঝে থাকলেও মশা আপনাকেই বেশি কামড়ায়! আপনার হাত ও পায়ের লাল হয়ে ফুলে যাওয়া মশার কামড়গুলো দেখে আপনার মনে হয়তো প্রশ্ন জাগে যে, কেন আপনার পাশেই বসে থাকা আপনার বন্ধু অথবা সহকর্মীকে মশা হয়তো একটি কামড় ও দেয়নি কিন্তু আপনাকে ঠিকই কামড়াচ্ছে? উত্তরটি হচ্ছে- আপনি মস্কিটো ম্যাগনেট। হ্যাঁ, আপনি ঠিকই শুনছেন! মস্কিটো ম্যাগনেট মানুষের প্রতিই মশা বেশি আকৃষ্ট হয়। কেন একজন মানুষ মস্কিটো ম্যাগনেট হয় সে সম্পর্কে বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যাগুলো সম্পর্কে জেনে নিই চলুন।

১। রক্তের গ্রুপ যখন “ও”
মেডিক্যাল এন্টোমোলজি নামক জার্নালে ২০০৪ সালে প্রকাশিত গবেষণা প্রতিবেদনে জানা যায় যে, অন্য রক্তের গ্রুপের (এ, বি বা এবি) মানুষদের চেয়ে যাদের রক্তের গ্রুপ “ও” তাদের প্রতি মশারা বেশি আকৃষ্ট হয়। তাই আপনার রক্তের গ্রুপ যদি “ও” হয় তাহলে মশারা আপনাকেই বেশি কামড়াবে।

২। গর্ভবতী নারীদের
পূর্ণবয়স্ক মানুষদের এবং শিশুদের তুলনায় গর্ভবতী নারীদের মশা বেশি কামড়ায়। ২০০৪ সালে ট্রপিক্যাল মেডিসিন এবং প্যারাসাইটোলজিতে প্রকাশিত বার্ষিক গবেষণা প্রতিবেদনে প্রকাশ করা হয় যে, অন্যদের তুলনায় গর্ভবতী নারীদের মশার কামড় খাওয়ার সম্ভাবনা দ্বিগুণ। এর কারণ হচ্ছে মশারা তাদের প্রতিই বেশি আকৃষ্ট হয় যাদের বিপাকের হার বেশি। বিপাকের হার বেশি হলে তাদের শরীরে কার্বন ডাই অক্সাইড উৎপন্ন হয় বেশি ফলে মশারাও আকৃষ্ট হয় বেশি। আর অন্যদের তুলনায় গর্ভবতী নারীদের বিপাকের হার বেশি হয়।

৩। জিনের কারণে
মশারা আপনাকে বেশি পছন্দ করার আরেকটি কারণ হচ্ছে আপনার জিন। ২০১৩ সালে ইনফেকশন্স, জেনেটিক্স এন্ড ইভল্যুশন নামক জার্নালে প্রকাশিত এক গবেষণা প্রতিবেদনে দেখানো হয় যে, হিউম্যান লিউকোসাইট অ্যান্টিজেন (HLA) নামক জিন আছে যাদের শরীরের কোষে তাদের প্রতি মশারা বেশি আকৃষ্ট হয়। এই জিন মানুষের শরীরের গন্ধ নিয়ন্ত্রণ করে। HLA জিন সম্বলিত মানুষের শরীরে এক বিশেষ ধরণের রাসায়নিক নির্গত হয় যার ফলে মশারা আকৃষ্ট হয়। যদি আপনার শরীরে HLA জিন থাকে তাহলে আপনি একটি দলে বা ভিড়ের মধ্যে থাকলেও মশা আপনার গন্ধ টের পায় এবং আপনাকেই কামড়ায়।

৪। নিয়মিত ব্যায়াম
ব্যায়ামের সময় শরীরে ল্যাক্টিক এসিড উৎপন্ন হয় যা ঘর্ম গ্রন্থির মাধ্যমে ত্বকের উপরিভাগে বাহির হয়। জার্মানির এক গবেষণায় নিশ্চিত করা হয়েছে যে, মশারা ল্যাক্টিক এসিডের প্রতি আকৃষ্ট হয় এবং কাছাকাছি দূরত্বে তা শনাক্ত করতে পারে।

৫। পায়ের দুর্গন্ধ
PLOS ONE নামক জার্নালে প্রকাশিত গবেষণা প্রতিবেদনে জানা যায় যে, যাদের পায়ে দুর্গন্ধ হয় তাদের প্রতি মশারা আকৃষ্ট হয়। পায়ের কটু গন্ধ সৃষ্টির জন্য ব্যাকটেরিয়া দায়ী।

ফ্লোরিডা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিক্যাল এন্টোমোলজির অধ্যাপক ডা. জোনাথন ডে বলেন, মশা কামড় দেয়ার জন্য শরীরের এমন স্থান বেছে নেয় যেখানে রক্ত ত্বকের কাছাকাছি থাকে যেমন- কপাল, কবজি, কনুই এবং ঘাড়। এছাড়া হাত ও পায়ে কামড়াতেও পছন্দ করে মশারা।

যাদের শরীরের তাপ বেশি তাদের ত্বকের উপরিভাগে রক্ত থাকে বলে তাদের প্রতিও মশারা আকৃষ্ট হয় বেশি। এছাড়াও লম্বা মানুষদের প্রতি এবং মেয়েদের চেয়ে ছেলেদের প্রতি মশা আকৃষ্ট হয় বেশি। মশাদের মধ্যে পুরুষ নয় নারী মশারাই রক্ত পান করে তাদের ডিমের পুষ্টিসাধনের জন্য।

মশার কামড় থেকে বাঁচতে আপনি যা করতে পারেন :
– পিসারিডিন, DEET বা IR 3535 যুক্ত পোকানাশক ব্যবহার করুন আপনার ঘরকে মশামুক্ত করতে

– ত্বকে লেমন ইউক্যালিপটাস তেল বা প্যারামেন্থন-ডায়ল পণ্য ব্যবহার করতে পারেন

– মশা কামড়ানোর সময় বিশেষ করে সন্ধ্যায় বাহিরের কাজ করা থেকে বিরত থাকুন। যদি বাহিরে যেতে হয় তাহলে বড় হাতার জামা, পেন্ট ও মোজা পরুন।

– আপনার বাড়ির দরজা ও জানালায় নেট লাগাতে পারেন যাতে মশা ঢুকতে না পারে।

– ঘরের ভেতরে বা বাহিরে কোথাও যেনো পানি জমে না থাকে সেদিকে খেয়াল করুন।

– হালকা রঙের কাপড় পরুন, কারণ মশারা গাঁড় রঙের প্রতি আকৃষ্ট হয়।



মন্তব্য চালু নেই