অদৃশ্য সাপের কামড় আতংকে স্কুল শিক্ষার্থীসহ অর্ধশতাধিক অসুস্থ

ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলার গোয়ালদী গ্রামে অদৃশ্য সাপের কামড়ে স্কুল শিক্ষার্থী, মহিলা ও বৃদ্ধসহ অর্ধশতাধিক লোক অসুস্থ হয়ে পড়েছে। এ নিয়ে এলাকায় দেখা দেখা দিয়েছে চরম আতংক। আক্রান্তরা প্রচন্ড বমি, খিচুনী, শরীরে জ্বালাপোড়াসহ প্রচন্ড অসুস্থ হয়ে পড়ছে। সোমবার রাত থেকে মঙ্গলবার দুপুর পর্যন্ত স্কুল শিক্ষার্থী, মহিলা ও বৃদ্ধসহ প্রতিদিনই আক্রান্তর সংখ্যা বাড়ছে।

আক্রান্তরা বলেন তাদের শরীরে অদৃশ্য কোন বস্তু দংশন করে উধাও হয়ে যায়। এর পর শরীরে ঝাকুনি দিয়ে যন্ত্রনাসহ জ্বালাপোড়া শুরু হয়।

সরেজমিনে এলাকার ঘুরে জানা গেছে, গোয়ালদী ও পার্শ্ববর্তী গ্রামে গত দুই দিনে অর্ধশতাধিক গ্রামবাসীর অদৃশ্য সাপের দংশনে আক্রান্ত হয়েছে। সংবাদ কর্মীদের উপস্থিতেই ১০/১৫জন মহিলা ও স্কুল শিক্ষার্থীসহ সাপে দংশনে আহত হওয়ার কথা বলে গুরুত্বর অসুস্থ হয়ে পড়ে।

তবে আক্রান্তদের পরীক্ষা করে দেখা গেছে তাদের শরীরে বিষধর কোন প্রাণীর দংশনের চি‎হ্ন পাওয়া যায়নি। আক্রান্তদের মধ্যে স্কুল শিক্ষার্থী ও মহিলাদের সংখ্যাই বেশী। একই পরিবারে ৫/৭জন অদৃশ্য সাপে দংশন করেছে বলে অভিযোগ করেন।

আক্রান্তদের মধ্যে গুরুত্বর অসুস্থরা হচ্ছে রকমান হাওলাদারের ছেলে কামরুল হাওলাদার (২৫), মনির মিয়ার স্ত্রী লিপি বেগম (১৮), ইয়াকুব মোল্যার কন্যা দশম শ্রেণিতে পড়–য়া শিক্ষার্থী কেয়া আক্তার (১৫), মোশারফ মোল্যার স্ত্রী সোনিয়া বেগম (২৫), লিটু মিয়ার স্ত্রী লাবনী বেগম (২৫) ছোরহাব হাওলাদারের ছেলে রেজাউল হাওলাদার (৩৫), ৪র্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী রাসেল মোল্যা (১০), মতিয়ার মোড়লের ছেলে ৬ষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থী তরিকুল (১২), জহাঙ্গীর হাওলাদারের ছেলে ৪র্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী আকাশ হাওলাদার (১০), মতিয়ার মোড়লের স্ত্রী নাজমা বেগম (৪৫), দুই পুত্র তাইজুল (২৫), ৮ম শ্রেণির শিক্ষার্থী সামিম (১৪), আওলাদ হাওলাদারের স্ত্রী লাইলী বেগম (৪৫), সাদিয়া (৩০), রত্না বেগম (২৮) মাজেদ হাওলাদারের ছেলে রুবেল হাওলাদার (১৬), রেজাউল মিয়া (২৮) সেকেন মোড়লের কন্য ৭ম শ্রেণির শিক্ষার্থী পাপিয়া (১৩), হাসমত মোড়লের কন্যা ৬ষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থী সম্পা আক্তার (১২), একরাম মোল্যার মেয়ে ৮ম শ্রেণির শিক্ষার্থী সোমা আক্তার (১৪), ওমর আলীর মেয়ে হালিমা (৩০), সাবেক ইউপি সদস্য আ: হাই হাওলাদার (৬০), নাতি মুরসালিন (০৫), বেলায়েত মোড়লের মেয়ে ৯ম শ্রেণির শিক্ষার্থী লতা আক্তার (১৫), মন্টু শেকের স্ত্রী বিউটি বেগম (৬০), শাহালম মাতুব্বরের স্ত্রী আনোয়ারা বেগম (৫৫), মেয়ে ১০ম শ্রেণির শিক্ষার্থী দোলা আক্তার (১৬), নুর আলম মাতুব্বরের স্ত্রী জাহানারা বেগম (৪০), সামচু মাতুব্বরের স্ত্রী হেপী আক্তার (৩০), সামচুল মাতুব্বরের স্ত্রী স্বরূপজান বেগম (৫০), লিটু মোল্যার মেয়ে লিমা আক্তার (০৩)।

এছাড়াও কয়েকদিন পূর্বে বেশ কয়েকজন আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা ঘটে। আক্রান্তরা চিকিৎসা কেন্দ্রে গিয়ে সাপের কোন প্রতিষেধক ঔষধ না পেয়ে শেষ ভরসা হিসেবে ওঝার শরনাপন্ন হচ্ছে। এ ব্যাপারে গোয়ালদী গ্রামের আক্রান্ত আ: হাই হাওলাদার বলেন, রাতে আমার পায়ে কোন অদৃশ্য বস্তু আঘাত করেছে বলে মনে হয়। কিছুক্ষণের মধ্যে আমি গুরুত্বর অসুস্থ্য হয়ে পড়ি। তবে সেবা শ্রশ্রুষা করার পর আমি সুস্থ হয়ে উঠি।

একই গ্রামের পারভেজ হাওলাদার বলেন, প্রতিদিন গড়ে ২০/২৫জন অদৃশ্য সাপের আক্রমনে অসুস্থ হয়ে পড়ছে। স্থানীয় জনৈক ওঝা সামাদ খালাসীকে এনে বিষ নামিয়ে দিলে তারা সুস্থ হয়ে উঠছে। গ্রামের মসজিদের ইমাম আবু সাঈদ বলেন, ঘটনাটি অনেকটাই আতংকগ্রস্থ হয়ে অদৃশ্য সাপে দংশন বলে চালিয়ে দেওয়া হচ্ছে।

তবে বিষয়টি কোন ভাইরাস জনিত রোগের কারণে ঘটতে পারে। চিকিৎসকদের মধ্যেমে পরীক্ষা নিরীক্ষার পর আসল ঘটনাটি উৎঘটন হওয়া দরকার। এ ব্যাপারে উক্ত গ্রামে প্রায় অর্ধশতাধিক আক্রান্তদের চিকিৎসা করা জনৈক ওঝা সামাদ খালাসী বলেন, এটা জ্বীন জাতীয় কোন সাপের আক্রমনে ঘটনাটি ঘটছে বলে মনে হয়।

এ দিকে উক্ত গ্রামে সংবাদকর্মীদের সামনে হঠাৎ ১০/১২জন গুরুত্বর অসুস্থ হয়ে পড়ে। এ সময় জনৈক ওঝা সামাদ খালাসী ঝাড় ফুঁ দিয়ে তাদের চিকিৎসা করেন। স্থানীয়রা বলেন সামাদ খালাসী চিকিৎসা দিলেও টাকা পয়সা তো দূরের কথা এক গ্লাস পানিও পান করেন না।

এ রির্পোট লেখা পর্যন্ত আক্রান্তর সংখ্যা আশংকাজনক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ নিয়ে এলাকায় ভীতিকর পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে।



মন্তব্য চালু নেই