অক্ষয়ের ‘রুস্তম’-এর আসল কাহিনী জানেন? জানলে ছবি না দেখে পারবেন না

১৯৫৯ সালে নিজের স্ত্রীর প্রেমিককে খুন করে পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করেছিলেন ভারতীয় নৌবাহিনীর কম্যান্ডার কে এম নানাবতী। এই ঘটনার পরে কয়েক বছর ধরে বিভিন্ন আদালতে এই মামলা চলেছিল।

আগামী ১২ অগস্ট মুক্তি পেতে চলেছে অক্ষয় কুমার অভিনীত ‘রুস্তম’। ছবির ট্রেলার ইতিমধ্যেই দারুণ জনপ্রিয় হয়েছে। ট্রেলার দেখেই বোঝা যায়, ছবিতে টানটান উত্তেজনা থাকবে। কিন্তু এই রুস্তম ১৯৫০-এর দশকের একটি সত্যিকারের ঘটনা অবলম্বনে তৈরি। এবং এই ঘটনাটি ভারতীয় বিচারব্যবস্থার ইতিহাসেও যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ।
১৯৫৯ সালে নিজের স্ত্রীর প্রেমিককে খুন করে পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করেছিলেন ভারতীয় নৌবাহিনীর কম্যান্ডার কে এম নানাবতী। এই ঘটনার পরে কয়েক বছর ধরে বিভিন্ন আদালতে এই মামলা চলেছিল। এই মামলাটিই ভারতের ইতিহাসে শেষ মামলা যেটিতে জুরি ট্রায়াল পদ্ধতিতে আসামীর বিচার হয়েছিল। অর্থাৎ, বিচারকের সঙ্গে কয়েকজন সাধারণ মানুষও আসামীর বিচার করতেন। বলা হয়, এই মামলাটি চলাকালীন সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে সংবাদমাধ্যমের একাংশ অভিযুক্ত কম্যান্ডার কে এম নানাবতীর প্রতি প্রকাশ্যে সহানুভূতি এবং সমর্থন জানিয়েছিল। যার প্রভাব পড়েছিল বিচারে। নানাবতীর স্ত্রী ছিলেন একজন ইংরেজ মহিলা। তাঁর নাম ছিল সিলভিয়া। স্ত্রী এবং তিন ছেলেকে নিয়ে তৎকালীন বম্বেতে থাকতেন নানাবতী। নৌবাহিনীতে চাকরির সুবাদে প্রায়শই বাইরে যেতে হত তাঁকে। আর তাঁর অনুপস্থিতিতেই তাঁর বন্ধু প্রেম আহুজার সঙ্গে নানাবতীর স্ত্রীর প্রেম হয়। বিদেশ সফর থেকে ফিরে নানাবতী সিলভিয়ার ব্যবহারে অস্বাভাবিকতা লক্ষ্য করেন। সিলভিয়া তাঁর এবং প্রেম আহুজার সম্পর্কের কথা নানাবতীর কাছে স্বীকারও করে নেন। নানাবতী স্ত্রী এবং ছেলেমেয়েদের সেদিন আগে থেকেই সিনেমা দেখাতে নিয়ে যাওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। সেই মতো তাঁদের সিনেমা দেখাতে নিয়ে গেলেও নিজে সিনেমা দেখেননি নানাবতী। স্ত্রী এবং ছেলেমেয়েদের সিনেমা হলে পৌঁছে দিয়ে তিনি প্রেম আহুজার বাড়িতে চলে যান। সেখানে গিয়ে তিনি প্রেম আহুজার কাছে জানতে চান, সিলভিয়াকে বিয়ে করে তাঁর সন্তানদের দায়িত্ব তিনি নেবেন কি না। প্রেম আহুজা না বলায় নিজের সার্ভিস রিভলবার থেকে পরপর তিনটি গুলি চালান নানাবতী। ঘটনাস্থলে মৃত্যু হয় প্রেম আহুজার। এরপরে নিজেই পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করেন ভারতীয় নৌবাহিনীর এই কম্যান্ডার।

তাঁর বিচার শুরু হয়। বিচার চলাকালীন সাধারণ মানুষ, সংবাদমাধ্যম, এমনকী ভারতীয় নৌবাহিনীর একাংশের পক্ষ থেকেও নানাবতী নির্দোষ বলে দাবি করা হয়। শেষ পর্যন্ত বম্বের সেশন কোর্ট তাঁকে বেকসুর খালাস বলে ঘোষণা করে। কিন্তু বম্বে হাইকোর্টে মামলাটি উঠলে নিম্ন আদালতের রায়কে খারিজ করে দিয়ে নানাবতীকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের নির্দেশ দেওয়া হয়। সুপ্রিম কোর্টও একই রায় বহাল রাখে।

প্রায় তিন বছর হাজতবাস করেন নানাবতী। ততদিনে তাঁর প্রতি জনসমর্থন আরও বেড়ে গিয়েছে। তাঁর সমর্থনে বম্বেতে মিছিলও বের হয়। পার্সি সম্প্রদায়, ভারতীয় নৌবাহিনী নানাবতীকে ক্ষমা করে দেওয়ার দাবিতে সরব হয়। শেষ পর্যন্ত প্রেম আহুজার বোন মামি আহুজা নানাবতীকে ক্ষমা করে লিখিত বয়ান দেন। এরপরে জেল থেকে ছাড়া পেয়ে স্ত্রী, তিন সন্তানকে নিয়ে কানাডায় চলে যান নানাবতী। কিন্তু জনমত এবং সংবাদমাধ্যম দ্বারা প্রভাবিত হওয়ার অভিযোগে ভারত থেকে জুরি ট্রায়াল পদ্ধতিতে বিচার ব্যবস্থা অবলুপ্ত হয়। ভারতের কোনও মামলায় এই পদ্ধতিতে নানাবতীরই শেষবার বিচার হয়। ২০০৩ সালে সেখানেই মৃত্যু হয় তাঁর। তবে ‘রুস্তম’-ই প্রথম নয়। ১৯৬৩ সালে সুনীল দত্ত অভিনীত ‘ইয়ে রাস্তে হ্যায় প্যায়ার কে’, এবং ১৯৭৩ সালে গুলজার পরিচালিত ‘অচানক’ ছবিগুলিও এই ঘটনার উপরে ভিত্তি করে তৈরি হয়েছিল। এরপরে ‘রুস্তম’ না দেখে পারবেন?



মন্তব্য চালু নেই