অক্টোবরেই বাড়ছে মৈত্রী ট্রিপ, সব কামরায় এসি

ঢাকা-কলকাতা সরাসরি রেলযাত্রীদের টিকিট সহজলভ্য করা ও স্বাচ্ছন্দ্য বাড়াতে অক্টোবর থেকেই একদিন বেড়ে সপ্তাহে চারদিন করে চলবে মৈত্রী এক্সপ্রেস। তবে তারিখ এখনও জানা যায়নি। আর আগামী বছরের জানুয়ারি থেকে সব কামরা সম্পূর্ণ শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত হবে।

এছাড়া যাত্রী চাপ কমাতে জানুয়ারি থেকে সপ্তাহে একদিন খুলনা-কলকাতা মৈত্রী ট্রেন-২ চালু করা হচ্ছে, যা ১৯৬৫ সাল পর্যন্ত চালু ছিল।

রেলওয়ের একজন কর্মকর্তা জানান, এখন সপ্তাহে তিনদিন করে চলাচল করছে মৈত্রী ট্রেন। যাত্রীদের চাহিদার কারণে মৈত্রীর সংখ্যা বৃদ্ধি ও সবগুলো কামরা শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত করা হচ্ছে।

তিনি জানান, ১০/১২ দিন আগেই শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষের সব আসন বিক্রি হয়ে যায়। অথচ সাধারণ শোভন কামরার বেশ কিছু আসন ফাঁকা রেখে মৈত্রী চলছে। এ কারণে সব কক্ষ শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত হবে।

ভারতের রাজধানী দিল্লিতে সম্প্রতি দুই দেশের রেল ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং অভিবাসন দফতরের শীর্ষ কর্মকর্তাদের মধ্যে তিন দিনব্যাপী বৈঠক শেষে এ সিদ্ধান্ত হয়েছে। বর্তমানে সপ্তাহে তিনদিন রোববার, বুধবার ও শুক্রবার ঢাকা থেকে কলকাতায় যায় মৈত্রী ট্রেন। আর শনিবার, রোববার ও মঙ্গলবার কলকাতা থেকে ঢাকায় আসে।

বর্তমানে সাতটি কোচ সম্বলিত মৈত্রী এক্সপ্রেসের ভারতীয় ট্রেনের বগি বড় বলে এর আসন সংখ্যা ৪৫৯টি। এর মধ্যে এসি সিট ২৭টি, এসি চেয়ার ১৪৬টি এবং শোভন ২৮৬টি। আর বাংলাদেশি ট্রেনে আসন ৪১৮টি। এর মধ্যে এসি সিট ৩৬টি, এসি চেয়ার ৮০টি এবং শোভন রয়েছে ৩০২টি।

মৈত্রীর টিকিটের সঙ্গেই ভ্রমণ ট্যাক্স কেটে নেওয়া হয়। নন এসি টিকিটের মূল্য প্রতিটি ৬০০ টাকা, ভ্রমণ ট্যাক্স ৫০০ টাকাসহ ১ হাজার ১০০ টাকা। নন এসি টিকিটে ভ্যাট দিতে হয় না। এসি চেয়ারকোচের টিকিটের মূল্য ১৫ শতাংশ ভ্যাটসহ ১ হাজার ৬৫৩ টাকা। সোফাসহ এসি কামরার টিকিট ২ হাজার ৩৫০ টাকা।

এদিকে সময় কমাতে দুই দেশের অভিবাসন ও শুল্ক কার্যক্রম দর্শনা ও গেদের পরিবর্তে ঢাকার ক্যান্টনমেন্ট এবং কলকাতার চিৎপুর রেলস্টেশনে সম্পন্ন করার সিদ্ধান্তও নেওয়া হয়েছে বৈঠকে।

বাংলাদেশ রেলের ওই কর্মকর্তা আরও জানান, দুই দেশের প্রতিনিধিদের মধ্যে পণ্যবাহী ট্রেন চলাচলের বিষয়েও কথা হয়েছে বৈঠকে। আলোচনা হয়েছে ত্রিপুরার আগরতলা ও বিলোনিয়ার সঙ্গে বাংলাদেশের আখাউড়া ও ফেনীর পণ্য পরিবহন সংযোগ গড়ে তোলা বিষয়েও।

২০০৮ সালের ১৪ এপ্রিল বাংলা নববর্ষের প্রথম দিন বহুল প্রতীক্ষিত মৈত্রী ট্রেন চালু হয়। তখন এ ট্রেন সার্ভিস ছিল সপ্তাহে দু’দিন। যাত্রী চাপ বেড়ে যাওয়ার পর সপ্তাহে তিনদিন করে চলাচল শুরু হয়।

এখন প্রতিটি মৈত্রী এক্সপ্রেস থেকে বছরে দুই কোটি টাকা নিট লাভ করছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। তিনটি মৈত্রী ট্রেন থেকে বছরে মুনাফা হচ্ছে ছয় কোটি টাকা। অথচ মৈত্রী রেল চালুর পর থেকে বেশ কিছুদিন ধরে লোকসান গুণেছে। এমনকি বন্ধ করে দেওয়ার কথাও ভাবা হয়েছিল।

সেই লোকসান থেকে এমন অভাবনীয় মুনাফায় মৈত্রীর ট্রিপও সপ্তাহে তিনদিন থেকে চারদিন বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে দু’দেশের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। সপ্তাহে আরও একটি মৈত্রী ট্রেন চালু হলে বছরে নিট মুনাফা আসবে আট কোটি টাকা।

সূত্র জানায়, মৈত্রীর আয়ের ৭৫ শতাংশ পায় বাংলাদেশ আর ২৫ শতাংশ আয় ভারতের। কেননা, রেলপথের দূরত্বের তিন চতুর্থাংশ পড়েছে বাংলাদেশে। এজন্য আয়ের চুক্তিটাও হয়েছে পথের দূরত্ব হিসাব করেই।

ঢাকা-কলকাতা রেলপথের দূরত্ব ৩৭৫ কিলোমিটার। ঢাকার ক্যান্টনমেন্ট রেলস্টেশন থেকে সকাল ৮টা ১০ মিনিটে (বাংলাদেশ সময়) কলকাতার চিৎপুরের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায় মৈত্রী ট্রেন। কলকাতায় পৌঁছায় সন্ধ্যা ছয়টায় (ভারতীয় সময়)। অন্যদিকে কলকাতা থেকে ছাড়ে সকাল ৭টা ১০ মিনিটে (ভারতীয় সময়) এবং ঢাকা পৌঁছায় সন্ধ্যা ছয়টায় (বাংলাদেশ সময়)।

ঢাকা থেকে ছেড়ে ঈশ্বরদী রেলস্টেশনে ১৫ মিনিট ওয়াটারিংয়ের জন্য যাত্রা বিরতি করে মৈত্রী ট্রেন। এরপর কাস্টমস-ইমিগ্রেশনের জন্য বাংলাদেশের সীমান্ত স্টেশন দর্শনায় ১ ঘণ্টা এবং ভারতের সীমান্ত স্টেশন গেঁদেতে দেড় ঘণ্টা যাত্রা বিরতি করে।

অনেক চড়াই-উৎরাই পার হয়ে মৈত্রী ট্রেন এখন দু’দেশের জন্যই লাভজনক। বাংলাদেশ-ভারত ভ্রমণকারীদের কাছেও এখন দারুণ জনপ্রিয় বাহন এ ট্রেন।খবর বাংলানিউজের।



মন্তব্য চালু নেই