অকার্যকর হরতালের প্রভাব কেবল পরীক্ষায়

অকার্যকর হরতালের প্রভাব অন্য কোথাও না পড়লেও বাঁধাগ্রস্ত হচ্ছে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা। এ ছাড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে ক্লাস-পরীক্ষাও অনিয়মিত হয়ে পড়েছে।

চলতি বছরের ৬ জানুয়ারি থেকে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের লাগাতার অবরোধ কর্মসূচি চলছে। পাশাপাশি দফায় দফায় বাড়ানো হচ্ছে হরতাল। অনেকটাই ভোঁতা হয়ে গেছে চলমান হরতাল-অবরোধ। অকার্যকর হরতালে যেমন বিএনপি জোটের নেতাকর্মীদের মাঠে দেখা যাচ্ছে না তেমনি এ কর্মসূচির প্রভাবও পড়ছে না জনজীবনে। অন্যদিকে স্বাভাবিক রয়েছে ব্যাংক, সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসহ কর্মক্ষেত্র।

জনজীবনে হরতালের প্রভাব না পড়লেও শিক্ষাখাতে হরতালের প্রভাব পড়েছে ব্যাপকভাবে। নিরাপত্তার আশঙ্কায় ইতোমধ্যে এসএসসি ও সমমানের প্রতিটি পরীক্ষা পরিবর্তিত সময়ে (শুক্র ও শনিবার) নিচ্ছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এ ছাড়া ১২ ফেব্রুয়ারির পরীক্ষা স্থগিত করতে হয়েছে মন্ত্রণালয়কে। এটি কবে অনুষ্ঠিত হবে সে ব্যাপারে সিদ্ধান্ত জানানো হয়নি।

হরতালে এসএসসি পরীক্ষার ক্ষতি হচ্ছে জানিয়ে গত ২১ ফেব্রুয়ারি দুপুরে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, হরতালের কোনো প্রভাব নেই জনজীবনে। রাস্তায় নিয়মিত যানজট সৃষ্টি হচ্ছে। চাইলে আমরা পরীক্ষা নিতে পারি। কিন্তু শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার স্বার্থে পরীক্ষাগুলো পিছিয়ে দেওয়া হচ্ছে।

রাজধানীর একে স্কুল এ্যান্ড কলেজের এসএসসি পরীক্ষার্থী ইকরাম মৌমিত বলেন, হরতালের কারণে পরীক্ষাগুলো পিছিয়ে যাচ্ছে। অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে এসএসসি পরীক্ষাকে লক্ষ্য করেই এ সব কর্মসূচি চলছে। কারণ হরতালের কোনো প্রভাব দেখা যাচ্ছে না। এমনকি যারা হরতাল ডাকেন তারাও মাঠে নামছেন না। কিন্তু পরীক্ষার আগের দিন ঠিকই হরতাল ডাকা হচ্ছে। এভাবে পরীক্ষা পিছিয়ে যাওয়ায় আমাদের শিক্ষাজীবনের যে ক্ষতি হচ্ছে তা পূরণ হবে কীভাবে।

রাজধানীর ভিকারুননিসা নূন স্কুলের এসএসসি পরীক্ষার্থী নওরীন শ্যামা  বলেন, ‘প্রত্যেক পরীক্ষার এক-দু’দিন আগে সিদ্ধান্ত হচ্ছে পেছানোর। এর ফলে প্রস্তুতি সব মাঠে মারা যাচ্ছে। এভাবে পরীক্ষা হওয়ায় একটা পরীক্ষাও মনের মতো করে দিতে পারছি না। ফলাফল আশানুরূপ হবে না।’

আর নিরাপত্তার স্বার্থেই ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, স্টেট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ, ইবাইস ইউনিভার্সিটি, নর্দান ইউনিভার্সিটি, ইউনিভার্সিটি অব ইনফরমেশন এ্যান্ড সায়েন্সেসসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ রয়েছে। সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে খোঁজ নিয়ে এ তথ্য জানা গেছে।

স্টেট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগের প্রভাষক নৌশিন তাবাসসুম  বলেন, চলমান হরতাল-অবরোধে ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ ছিল। এখন শুক্র ও শনিবার ক্লাস নিয়ে ঘাটতি কমানোর চেষ্টা চলছে।

রাজধানীর ওয়াইডব্লিউসিএ স্কুলের কেজির শিক্ষার্থী শাহরীনের মা সাবিকুন্নাহার  বলেন, আগে শুক্র ও শনিবার স্কুল বন্ধ থাকত। এখন ওই দুদিনই ক্লাস হচ্ছে। হরতালের কারণে সপ্তাহের বাকি ৫ দিন স্কুল বন্ধ থাকছে। এভাবে পড়ালেখার কারণে ছেলেমেয়েরা ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। কোনোভাবেই এ ক্ষতি পুষিয়ে ওঠা সম্ভব নয়।

রাজধানীসহ সারাদেশে হরতাল-অবরোধের সবচেয়ে বেশি প্রভাব দেখা যায় যান চলাচলে। কিন্তু চলতি বছর দফায় দফায় হরতালের সময়সীমা বাড়লেও তেমন ব্যাহত হচ্ছে না যান চলাচল। বিশেষ করে রাজধানীসহ ঢাকার সংযোগ সড়কগুলোতে হরতাল-অবরোধে যানজট একটি নিয়মিত চিত্রে পরিণত হয়েছে। রবিবারও রাজধানীর অভ্যন্তরে ও সংযোগ সড়কগুলোতে যানজট দেখা গেছে।

রবিবার যশোর থেকে ঢাকায় এসেছেন তমাল ফিরোজ। তিনি একটি বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে কর্মরত। তমাল ফিরোজ  বলেন, গাবতলীতে তীব্র যানজটে পড়েছিলাম। সেখান থেকে মতিঝিলে আসতে প্রায় দু’ঘণ্টা সময় লেগেছে। এ ছাড়া ঢাকায় ঢুকেছিও বড় ধরনের যানজট পেরিয়ে।

ঢাকার সংযোগ সড়কে যানজটের কথা জানিয়ে সিলেটগামী মিতালী পরিবহনের চালক আফজাল হোসেন  বলেন, প্রথম দিকে ভয় কাজ করত। কিন্তু কতদিন আর বসে থাকা যায়? এ ছাড়া রাস্তায় যাত্রীর সংখ্যাও অনেকটা স্বাভাবিক। হরতাল থাকলেও ঢাকায় প্রবেশ করতে যানজটে পড়তে হচ্ছে।

এ ছাড়া রাজধানীর নয়াবাজার, ধোলাইখাল, গুলিস্তান, পল্টন, মতিঝিল, ফার্মগেট, মিরপুর, মগবাজারসহ বিভিন্ন সড়কেই দিনভর যানজট দেখা গেছে।

মিরপুরগামী বিহঙ্গ পরিবহনের চালক মেহেদী হাসান  বলেন, হরতালের কথা মানুষ এখন ভুলেই গেছে। রাস্তায় বেরুলে হরতাল যে আছে তা মনে হয় না। প্রথম কয়েকদিন যানজট কম থাকলেও এখন যেমন যানজট বেড়েছে, তেমনি বাসে যাত্রী দাঁড় করিয়েও নিয়ে যেতে হয়।

রাজধানীর কেনাকাটার স্থানগুলোতেও মানুষের স্বাভাবিক উপস্থিতি রয়েছে। এ ছাড়া পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকায় নিত্যপণ্যের বাজারদরও অনেকটা স্বাভাবিক।

মিরপুরের কাদের রাইস এজেন্সির মালিক ও চাল আড়ৎ ব্যবসায়ী বহুমুখী সমিতির সাবেক সভাপতি রহিম উদ্দীন  বলেন, হরতাল-অবরোধের কারণে যে প্রভাব রয়েছে তাতে গাড়িভাড়া একটু বেড়েছে। কিন্তু চাল আসা-যাওয়া স্বাভাবিক রয়েছে। বিক্রি কিছুটা কমেছে, কিন্তু সেটা হরতাল-অবরোধের কারণে নয়। আড়তের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় বড় আড়তের বিক্রি কমেছে।

এদিকে হরতাল-অবরোধেও স্বাভাবিক রয়েছে শেয়ারবাজারের লেনদেন। রবিবার দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) লেনদেনের পরিমাণ কিছুটা কম থাকলেও বেড়েছে সূচক। এ ছাড়া অপর পুঁজিবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) সূচকের পাশাপাশি লেনদেনের পরিমাণও বেড়েছে।

এ ছাড়া বইমেলা ছাড়াও রাজধানীর বিভিন্ন সাংস্কৃতিক আয়োজনে মানুষের উপস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। দ্য রিপোর্ট



মন্তব্য চালু নেই